অর্থনীতি

অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়তে আর্থিক সাক্ষরতা

আজ ৩ মার্চ আর্থিক সাক্ষরতা দিবস। আর্থিক সাক্ষরতা বলতে বোঝানো হয় সেই ক্ষমতা বা জ্ঞান, যা মানুষকে ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তির অর্থ–সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়, যেমন ব্যক্তিগত আর্থিক বাজেট তৈরি, সঞ্চয়, বিনিয়োগ, ঋণ ব্যবস্থাপনা ও ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও দক্ষতার সমষ্টি। এটি অর্থ ব্যবস্থাপনার সঠিক পদ্ধতি শেখানোর মাধ্যমে ব্যক্তির আর্থিক নিরাপত্তা, প্রতারণার ঝুঁকি হ্রাস ও আর্থিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

আর্থিক সাক্ষরতার গুরুত্ব

আর্থিক সাক্ষরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে অনেক মানুষ এখনো অনানুষ্ঠানিক অর্থব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে, সেখানে সুচিন্তিত আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা মানুষের জীবনযাত্রার মান উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন করতে পারে।

সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ:

আর্থিকভাবে শিক্ষিত ব্যক্তি জরুরি অবস্থার জন্য সঞ্চয় করে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করে সঠিক আর্থিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হন।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা:

একজন আর্থিকভাবে শিক্ষিত ব্যক্তি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় ভূমিকা রাখতে পারেন। যাঁরা আর্থিক ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করতে পারেন, তাঁদের আর্থিক সংকটের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা কম।

জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন:

সঠিক আর্থিক জ্ঞানের মাধ্যমে মানুষ আর্থিক সম্পদ দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে ও ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করে জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে পারেন।

বাংলাদেশে আর্থিক সাক্ষরতার অবস্থা

গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সত্ত্বেও দেশের জনসংখ্যার বৃহৎ একটি অংশ এখনো আর্থিক সাক্ষরতার আওতার বাইরে। ২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুসারে, দেশে আর্থিক সাক্ষরতার হার ছিল ৭৬.৮ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের আর্থিক সাক্ষরতার হার ছিল প্রায় ২৮ শতাংশ, অর্থাৎ ৭০ শতাংশের বেশি মানুষেরই এই মৌলিক ধারণার অভাব আছে।

আর্থিক সাক্ষরতা উন্নয়নে গৃহীত ব্যবস্থা

বাংলাদেশে আর্থিক সাক্ষরতা উন্নয়নের জন্য বহুমুখী পদ্ধতি প্রয়োজন, যার মধ্যে সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতসহ বিভিন্ন অংশীজনদের অংশগ্রহণ আবশ্যক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ:

বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে আর্থিক সাক্ষরতা প্রসারের প্রয়াস চালাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, ‘স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম’-এর লক্ষ্য হলো, তরুণ শিক্ষার্থীদের অর্থ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে শেখানো।

ব্যাংকের মাধ্যমে কার্যক্রম:

বাংলাদেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক গ্রাহকদের আর্থিক সাক্ষরতা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। কিছু ব্যাংক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বিনা মূল্যে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করে।

মোবাইল আর্থিক পরিষেবা (এমএফএস):

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সঙ্গে মোবাইল ফোন অপারেটর ও ব্যাংকগুলো এসএমএস, মোবাইল অ্যাপস ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আর্থিক সাক্ষরতা তৈরিতে কাজ করছে।

বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রম:

বাংলাদেশের বিভিন্ন এনজিও আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বিভিন্ন ভূমিকা রাখছে।

আর্থিক সাক্ষরতা ব্যক্তিগত ও জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি। বাংলাদেশে যেখানে অনেক ব্যক্তির এখনো মৌলিক আর্থিক জ্ঞানের অভাব আছে, আর্থিক সাক্ষরতার উন্নতি জনগণের অর্থনৈতিক জীবনে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নতি আনতে পারে। চলমান উদ্যোগ, সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশ আর্থিকভাবে শিক্ষিত সমাজ গড়ে তুলতে পারে।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button