আমাদের মূল লক্ষ্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান: আশিক চৌধুরী

বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী মেনুফ্যাকচারিং হাবে পরিণত করার লক্ষ্য সামনে রেখে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া চর এলাকা পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, “আমাদের এখন মূল লক্ষ্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। আর তা নিশ্চিত করতে হলে দেশের বন্দরগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন যেভাবে এগোচ্ছি, তাতে করে আগামী এক দশকের মধ্যে ভিয়েতনামের ধারেকাছেও যেতে পারবো না। বর্তমানে ভিয়েতনামের রয়েছে ৪৪টি আধুনিক পোর্ট। অন্যদিকে, মাতারবাড়িসহ দেশের সবগুলো পোর্ট চালু হলে আমাদের পোর্টের সংখ্যা হবে মাত্র ছয়টি। এতে করে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।”
বন্দর অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া গতি আসবে না
চট্টগ্রাম বন্দর দেশের প্রধান বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার হলেও দিন দিন এর সক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন নতুন বন্দর অঞ্চল গড়ে তোলার পাশাপাশি বিদ্যমান বন্দরগুলোর সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের উপর গুরুত্বারোপ করছেন বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
আশিক চৌধুরী বলেন, “আমাদের রপ্তানি ও আমদানি কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও প্রতিযোগিতামূলক করতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিকল্প নেই। বিশ্বের বড় বড় বিনিয়োগকারীরা তখনই আসবে, যখন তারা নিশ্চিত হবে যে বাংলাদেশে তাদের উৎপাদিত পণ্য দ্রুত রপ্তানি ও কাঁচামাল দ্রুত আমদানি করা সম্ভব।”
ভিয়েতনামের সঙ্গে তুলনা ও আমাদের সীমাবদ্ধতা
ভিয়েতনাম বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় একটি সফল উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, গার্মেন্টস ও মেশিনারি খাতে। দেশটির বন্দরের সংখ্যা এবং সেগুলোর ব্যবস্থাপনা বিশ্বমানের। অন্যদিকে বাংলাদেশে এখনো অনেক বন্দর পুরনো প্রযুক্তি ও অব্যবস্থাপনার মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
“ভিয়েতনামের মতো ৪৪টি পোর্ট না থাকলেও, আমাদের অন্তত ১৫ থেকে ২০টি কার্যকর ও আধুনিক বন্দর গড়ে তুলতে হবে। এটাই আগামী ১০ বছরের লক্ষ্য হওয়া উচিত,” বলেন আশিক চৌধুরী।
লালদিয়া চর হবে নতুন সম্ভাবনার দ্বার
চট্টগ্রামের লালদিয়া চর এলাকায় সম্ভাব্য একটি নতুন কনটেইনার টার্মিনাল বা ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন গড়ে তোলার সম্ভাবনা মূল্যায়নে পরিদর্শনে যান আশিক চৌধুরী ও তার প্রতিনিধিদল। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম, ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান।
চট্টগ্রাম বন্দরের বর্তমান চাপ কমাতে লালদিয়া চর একটি বিকল্প বাণিজ্যিক হাব হিসেবে গড়ে তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। এলাকাটি নদীপথে সহজে পৌঁছানো যায় এবং এর চারপাশে পর্যাপ্ত খালি জমিও রয়েছে।
কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়নে জোর
আশিক চৌধুরী বলেন, “শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, আমাদের লক্ষ্য হতে হবে স্থানীয় জনগণের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ তৈরি করা। শিল্পাঞ্চল, বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এই অঞ্চলে কয়েক লাখ নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।”
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের নিয়ে যৌথভাবে একটি দক্ষতা উন্নয়ন রোডম্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে স্থানীয় যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শিল্প খাতে কাজে লাগানো যাবে।
বিনিয়োগ পরিবেশে সহায়ক উদ্যোগ
সরকারি নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হলে তাদের জন্য একটি নিরাপদ, স্থিতিশীল ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
আশিক চৌধুরী বলেন, “আমরা বিনিয়োগকারীদের যে বার্তাটি দিতে চাই তা হলো—বাংলাদেশ এখন প্রস্তুত। তবে শুধু কথায় নয়, বাস্তবসম্মত পদক্ষেপের মাধ্যমেই এই বার্তাটি বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে। বন্দর, বিদ্যুৎ, গ্যাস, এবং পরিবহন অবকাঠামোতে বিনিয়োগই এর অন্যতম শর্ত।”
উপসংহার
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভবিষ্যৎ অনেকাংশেই নির্ভর করছে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর। আর তা সফল করতে হলে দরকার হবে কার্যকর বন্দর ব্যবস্থাপনা ও শিল্প-সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তোলা।
আশিক চৌধুরীর কথাগুলো শুধু নীতিনির্ধারকদের জন্য নয়, বরং দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নে আগ্রহী প্রতিটি নাগরিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে।