বাংলাদেশ

রোজার আগেই নির্বাচন, সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

Advertisement

আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, মাঠপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রয়োজনীয় সব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং নির্বাচনের আগে স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য।

রোজার আগেই আসন্ন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের সার্বিক প্রস্তুতি এখন কার্যত শেষ পর্যায়ে—এ তথ্য জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। শনিবার দুপুরে পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি জানান, নির্বাচন ঘিরে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে মাঠপর্যায়ের বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ঘটনাটির বিস্তারিত

পটুয়াখালী সার্কিট হাউসে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে এবং আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে স্থিতিশীল থাকে এবং ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

তিনি জানান, মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তা বাহিনী—পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, কোস্টগার্ডসহ সব ইউনিটকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বহুমাত্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিবারণমূলক টহল, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় নজরদারি এবং দ্রুত সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষা এবং স্বচ্ছ নির্বাচন পরিচালনা করাই সরকারের প্রধান দায়িত্ব। সেই লক্ষ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীকে যথাযথ প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

নির্বাচন-পূর্ব প্রস্তুতির পটভূমি

এ বছরের শুরু থেকেই সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। প্রশাসনের অভ্যন্তরে কর্মীসংখ্যা পুনর্বিন্যাস, মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা বদলি, প্রতিটি জেলায় নিরাপত্তা মূল্যায়ন, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে বিশেষ ব্যবস্থার মতো পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।

পটুয়াখালী, কুয়াকাটা ও উপকূলীয় অঞ্চলে শীত মৌসুমে পর্যটকের চাপ বৃদ্ধি পায়। নির্বাচনের আগে এসব স্থানে নিরাপত্তার বিষয়টি অতিরিক্ত গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষ করে ট্যুরিস্ট পুলিশ, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের দায়িত্ব বাড়ানো হয়েছে যাতে সমুদ্রপথ ও পর্যটন এলাকায় কোনো নিরাপত্তা শঙ্কা না থাকে।

গত কয়েক মাসে একাধিক জেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন এবং নিরাপত্তা ইউনিটগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ প্রশাসনের প্রস্তুতি পর্যায়ের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সরকারী পদক্ষেপ

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, দেশের কোথাও যেন নাশকতা, অস্থিরতা বা সহিংসতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি চালানো হচ্ছে। প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন এবং দ্রুত সাড়া দল প্রস্তুত রাখা হবে।

পটুয়াখালী পুলিশ লাইন পরিদর্শনের সময় তিনি স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নির্বাচন ঘিরে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার দিকনির্দেশনা দেন। তিনি মাঠপর্যায়ের সদস্যদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সহযোগিতামূলক আচরণ বজায় রাখার নির্দেশনাও দেন।

পরিদর্শনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল নৌপথের নিরাপত্তা। উপকূলীয় এলাকায় জেলেদের নিরাপত্তা, নৌযান চলাচলের স্বাভাবিকতা এবং সমুদ্রপথে অপরাধ দমন—এসব বিষয়েও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নির্দেশনা দেন।

পর্যটন অঞ্চল ও উপকূলীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতি

কুয়াকাটা অঞ্চলে শীত মৌসুমে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক সমাগম হয়। নির্বাচন এবং পর্যটন মৌসুম একই সময়ে হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত চ্যালেঞ্জ আরও বাড়তে পারে। তাই ট্যুরিস্ট পুলিশ ও নৌ পুলিশ ক্যাম্পে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেন।

তিনি জানান, পর্যটকদের নিরাপদ চলাচল, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং সমুদ্রের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে অতিরিক্ত নজরদারির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকায় নিয়মিত টহল বৃদ্ধি এবং সিসিটিভি নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে।

অপরদিকে, মৎস্যবন্দর মহিপুর এলাকা পরিদর্শনের সময় তিনি জেলেদের নিরাপত্তা, মাছধরা নৌকার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং সমুদ্রকেন্দ্রিক অপরাধ দমনে কঠোর নজরদারির নির্দেশনা প্রদান করেন। কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচনের আগে নিরাপত্তা অগ্রগতি যাচাই করাই তার সফরের প্রধান উদ্দেশ্য।

বিশেষজ্ঞদের মতামত ও বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রোজার আগে নির্বাচন আয়োজন সরকারের জন্য একটি যৌক্তিক সময় নির্ধারণ, কারণ এই সময়ে জনগণের আগ্রহ, অংশগ্রহণ এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতি—সবই তুলনামূলকভাবে ভালো থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা যদি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব।

তবে তাদের সতর্কতা—রাজনৈতিক পরিবেশ সংবেদনশীল হওয়ায় মাঠপর্যায়ের সুষ্ঠু সমন্বয় এবং স্বচ্ছ আচরণই দেশের সামনে থাকা বড় চ্যালেঞ্জ।

সব মিলিয়ে দেশের সার্বিক নির্বাচনী প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে, এবং সরকারের লক্ষ্য রোজার আগেই একটি গ্রহণযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজন। নিরাপত্তা বাহিনীর প্রস্তুতি, প্রশাসনিক তৎপরতা এবং পর্যটন-উপকূলীয় অঞ্চলে বিশেষ ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির চিত্রই ফুটে উঠছে। তবে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কতটা স্বচ্ছ ও স্থিতিশীলভাবে সম্পন্ন হবে, তা নির্ভর করবে মাঠপর্যায়ের বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সহযোগিতার ওপর।

এম আর এম – ২২৪০,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button