বাংলাদেশ সরকার আর্জেন্টিনা ও আয়ারল্যান্ডে নতুন দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের ৪৮তম সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের আলোকে দুই দেশের রাজধানীতে যথাক্রমে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেস এবং আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে বাংলাদেশি দূতাবাস চালু করা হবে।
অনুমোদন ও প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশের বিদেশ নীতি ও কূটনৈতিক সম্প্রসারণের ধারাবাহিকতায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যেখানে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলে দূতাবাস চালুর মাধ্যমে ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে, আয়ারল্যান্ড ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রীয় দেশ। এখানে দূতাবাস খোলার মাধ্যমে শিক্ষাবিদ, প্রযুক্তি, বাণিজ্য এবং পর্যটন খাতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করা সম্ভব হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “নতুন দূতাবাস স্থাপন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করবে এবং কূটনৈতিক কার্যক্রমকে আরও সুসংহত করবে। এটি বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্যও সুবিধা বয়ে আনবে।”
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক ও সিদ্ধান্ত
বৃহস্পতিবারের সভায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা দুই দেশে দূতাবাস খোলার প্রয়োজনীয়তা এবং সম্ভাব্য বাজেটের বিষয়গুলো আলোচনা করেন।
সভায় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা একমত হন যে, আর্জেন্টিনা ও আয়ারল্যান্ডে দূতাবাস স্থাপন বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া বৈঠকে দু’দেশে দূতাবাস চালুর জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা ও পরিচালন কাঠামোও অনুমোদন দেওয়া হয়।
উপদেষ্টা পরিষদ সভার পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, এই দূতাবাসগুলোতে পর্যায়ক্রমে অভিজ্ঞ কূটনীতিক এবং প্রশিক্ষিত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে।
দু’দেশে দূতাবাস খোলার সম্ভাব্য প্রভাব
আর্জেন্টিনা: বাণিজ্য ও বিনিয়োগে সম্ভাবনা
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে দূতাবাস খোলার মাধ্যমে বাংলাদেশি পণ্যের রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হবে। কৃষি, প্রযুক্তি ও তৈরি পোশাক শিল্পে দুই দেশের মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আর্জেন্টিনা-বাংলাদেশের মধ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হবে।
আয়ারল্যান্ড: শিক্ষাবিদ ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতা
ডাবলিনে দূতাবাস স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও গবেষকদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হবে। এছাড়া তথ্যপ্রযুক্তি, সফটওয়্যার, স্টার্টআপ ও পর্যটন খাতে দুই দেশের সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
পররাষ্ট্র বিশ্লেষকরা মনে করেন, আয়ারল্যান্ডের সাথে সম্পর্ক সুসংহত হলে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কূটনৈতিক সম্প্রসারণ ও আন্তর্জাতিক অবস্থান
বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ এখন দ্রুত অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্প্রসারণে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন দূতাবাস খোলার মাধ্যমে দেশের আন্তর্জাতিক উপস্থিতি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদার করে বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সম্ভব হবে।
একজন কূটনীতিক বলেন, “এই ধরনের উদ্যোগ বাংলাদেশের কূটনৈতিক নীতি এবং বৈশ্বিক কৌশলকে আরও কার্যকর করবে। পাশাপাশি এটি আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।”
নাগরিক সুবিধা ও স্থানীয় প্রভাব
দূতাবাস স্থাপনের ফলে বাংলাদেশি নাগরিকরা স্থানীয় সরকারি ও সামাজিক সুবিধা সহজে গ্রহণ করতে পারবে। ভিসা, কনস্যুলার সেবা, নাগরিক সনদপত্র এবং জরুরি সহায়তা প্রদান আরও দ্রুত ও কার্যকর হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, নতুন দূতাবাস চালু হলে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী এবং পর্যটকদের জন্য সেবা সহজলভ্য হবে। এছাড়া স্থানীয় সমাজ ও অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের মাধ্যমে আর্জেন্টিনা ও আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশি দূতাবাস খোলার পথ সুগম হয়েছে। এটি কূটনৈতিক সম্প্রসারণ, বাণিজ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক উপস্থিতি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করবে। নতুন দূতাবাস চালু হলে দেশের কূটনৈতিক কার্যক্রম ও নাগরিক সুবিধা আরও কার্যকর হবে।
এম আর এম – ২২২৬,Signalbd.com



