বাংলাদেশ

ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করলেন পাক প্রধানমন্ত্রী

Advertisement

পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দেশটির আদালতের বাইরে সংঘটিত হামলার জন্য ভারতের সক্রিয় প্রক্সি গোষ্ঠীর দায় স্বীকার করেছেন।

হামলার ঘটনা এবং প্রাথমিক বিবরণ

মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের জেলা আদালতের বাইরে একটি ভয়াবহ আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। স্থানীয় সময় দুপুর ১২:৩৯ মিনিটে ঘটেছে এই বিস্ফোরণ, যা আদালতে শুনানির জন্য উপস্থিত সাধারণ পথচারীদের উপর চালানো হয়। এতে অন্তত ১২ জন নিহত এবং ২৭ জন আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের পরপরই পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং হামলার প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেন।

পাকিস্তানের পুলিশ জানিয়েছে, হামলাকারী আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে একটি পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালায়। বিস্ফোরণের ধরন ও বিস্তারিত ফরেনসিক প্রতিবেদনের অপেক্ষা চলছে।

পাক প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের মন্তব্য

হামলার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এক বিবৃতিতে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং ভারতের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, “ভারতীয় সহায়তায় সক্রিয় চরমপন্থি গোষ্ঠী ফিতনা আল-হিন্দুস্তান এই বোমা হামলা চালিয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তান থেকে ভারতীয় প্ররোচনায় সক্রিয় খাওয়ারিজরা ওয়ানায় নিরীহ শিশুদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটি ভারতের এক ধরনের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র।”

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান,

“সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত থাকবে এবং ফিতনা আল-হিন্দুস্তান ও ফিতনা আল-খাওয়ারিজের শেষ সন্ত্রাসী খতম না হওয়া পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা হবে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রাথমিক তথ্য

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভি সাংবাদিকদের জানান, হামলার সময় আদালতের প্রাঙ্গণে একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তিনি বলেন, “আমরা হামলার সব দিক খতিয়ে দেখছি এবং তদন্ত প্রক্রিয়া চলছে। হামলার ধরণ এবং দায়ী সত্তা নির্ধারণে ফরেনসিক রিপোর্টের ফলাফলের অপেক্ষা করতে হবে।”

তিনি বলেন,

“হামলাকারী আদালতের প্রবেশে ব্যর্থ হওয়ায় একটি পুলিশ গাড়ি লক্ষ্য করে আত্মঘাতী হামলা চালায়। এতে নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।”

পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এই হামলাকে ‘সতর্কবার্তা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন,

“পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থায় রয়েছে। যারা মনে করেন, সীমান্তে যুদ্ধ শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ, তারা আজকের ইসলামাবাদের আত্মঘাতী হামলার গুরুত্ব বুঝতে পারবে।”

তিনি আফগানিস্তানকে ইঙ্গিত করে বলেন, “কাবুলের শাসকরা পাকিস্তানে সন্ত্রাস বন্ধ করতে পারলেও ইসলামাবাদে এই হামলা কাবুলের একটি বার্তা হিসেবে এসেছে। পাকিস্তান পুরোপুরি সাড়া দিতে সক্ষম।”

পাক প্রেসিডেন্টের শোক ও সমবেদনা

পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি এই বিস্ফোরণকে ‘আত্মঘাতী বিস্ফোরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। জারদারি নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন। এছাড়া তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং হামলার তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছেন।

পূর্বপ্রসঙ্গ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্ত ও কূটনৈতিক উত্তেজনা বিদ্যমান। পাকিস্তান প্রায়ই ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ আনে। সাম্প্রতিক হামলাটি সেই প্রেক্ষাপটে ঘটেছে, যেখানে পাকিস্তান ভারতের সক্রিয় প্রক্সি গোষ্ঠীর দায় স্বীকার করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কাড়তে পারে।

নাগরিকদের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

হামলার ফলে নিহত ও আহতদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমেছে। স্থানীয় নাগরিকরা নিরাপত্তা ব্যবস্থার যথাযথ কার্যক্রম দাবি করেছেন। জনগণ এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

ইসলামাবাদে আত্মঘাতী হামলার ঘটনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ভারতের সক্রিয় প্রক্সি গোষ্ঠীর দায় স্বীকার করেছেন। দেশটির কর্মকর্তারা তদন্ত শুরু করেছেন এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই হামলা দুই দেশের কূটনীতি ও নিরাপত্তা প্রেক্ষাপটে নতুন দিক উন্মোচন করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক ঘটনা ভবিষ্যতে পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক এবং দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলতে পারে।

এম আর এম – ২১৯৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button