সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ২২ অতিরিক্ত বিচারককে স্থায়ী পদে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তবে বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর ছেলে দেবাশীষ রায় চৌধুরী এই নিয়োগ তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২২ বিচারক স্থায়ী
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে ২২ জন অতিরিক্ত বিচারককে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী পদে নিয়োগ দিয়েছেন।
প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকরা শপথ গ্রহণের পরই কার্যত দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সচিবের স্বাক্ষর রয়েছে।
নিয়োগপ্রাপ্ত ২২ জন বিচারকের তালিকা
নিয়োগপ্রাপ্ত বিচারকদের মধ্যে রয়েছেন:
১. বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার
২. বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেন
৩. বিচারপতি মো. মনসুর আলম
৪. বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুর
৫. বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা
৬. বিচারপতি মো. যাবিদ হোসেন
৭. বিচারপতি মুবিনা আসাফ
৮. বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলাম
৯. বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা
১০. বিচারপতি মো. আবদুল মান্নান
১১. বিচারপতি তামান্না রহমান খালিদী
১২. বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ
১৩. বিচারপতি মো. হামিদুর রহমান
১৪. বিচারপতি নাসরিন আক্তার
১৫. বিচারপতি সাথীকা হোসেন
১৬. বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ তাজরুল হোসেন
১৭. বিচারপতি মো. তৌফিক ইনাম
১৮. বিচারপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন
১৯. বিচারপতি শেখ তাহসিন আলী
২০. বিচারপতি ফয়েজ আহমেদ
২১. বিচারপতি মো. সগীর হোসেন
২২. বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজী
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে।
দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নিয়োগ বাদ
২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর ২৩ জনকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি। সেই তালিকায় ছিলেন বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর ছেলে দেবাশীষ রায় চৌধুরী। তবে এবার স্থায়ী পদে ২২ জনের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি একটি স্বাভাবিক প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ, যেখানে অতিরিক্ত বিচারক থেকে স্থায়ী পদে উন্নীত হওয়ার সময় বিভিন্ন নীতি ও বিবেচনা প্রয়োগ করা হয়।
পূর্ববর্তী নিয়োগ ও প্রক্রিয়া
অতীতের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারকরা দুই বছরের জন্য নিয়োগ পান। এই সময়ের মধ্যে তাদের কাজের মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় সুপারিশের ভিত্তিতে স্থায়ী পদে উন্নীত করা হয়।
২০২৪ সালের অতিরিক্ত নিয়োগের পর এবার এই ২২ বিচারককে স্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, নতুন নিয়োগের মাধ্যমে হাইকোর্টের কার্যক্ষমতা ও মামলার নিষ্পত্তি দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি পাবে।
আইনজীবী ও বিচারবিভাগের প্রতিক্রিয়া
আইন পেশার নেতৃবৃন্দ ও সুপ্রিম কোর্টের কর্মকর্তা মনে করছেন, নতুন নিয়োগ হাইকোর্টের কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, বিচারিক স্থিতিশীলতা ও মান নিশ্চিত করতে নিয়মিত মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একাধিক আইনজীবী বলেন, “হাইকোর্টে নতুন স্থায়ী বিচারক নিযুক্ত হওয়ায় মামলার ন্যায়পরায়ণ ও দ্রুত নিষ্পত্তি আরও সুনিশ্চিত হবে। তবে দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বাদ পড়া কিছু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।”
নিয়োগের গুরুত্ব ও প্রভাব
এই নিয়োগের ফলে হাইকোর্টের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিচারপ্রার্থী জনগণকে আরও দ্রুত সেবা পৌঁছানো সম্ভব হবে। এছাড়া বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিচার বিশ্লেষকরা বলছেন, হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বড় মামলার নিষ্পত্তি আরও দ্রুত এবং সুষ্ঠু হবে।
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্টে ২২ বিচারককে স্থায়ী পদে নিয়োগ দেওয়ায় বিচার বিভাগে নতুন শক্তি ও স্থিতিশীলতা যোগ হয়েছে। তবে বিএনপি নেতা নিতাই রায় চৌধুরীর ছেলে দেবাশীষ রায় চৌধুরীর নাম বাদ পড়ায় রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই নিয়োগ প্রক্রিয়া বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এম আর এম – ২১৯১,Signalbd.com



