বাংলাদেশ

ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণভোটের আহ্বান ছারছীনা পীরের

Advertisement

দেশে ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার দাবিতে গণভোট আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন ছারছীনা দরবারের পীর মাওলানা শাহ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন। রাজধানীর বনানী খানকায় সোমবার এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি এই আহ্বান জানান। তার মতে, বর্তমান সময়ে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা পারে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা, নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক সংকটের সমাধান দিতে।

ইসলামি হুকুমতের দাবিতে পীরের আহ্বান

বনানীর খানকায় আয়োজিত ধর্মীয় আলোচনা সভায় পীর মাওলানা শাহ আবু নছর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন বলেন,

“গণভোট যদি করতেই হয়, তবে আমি চাইবো সেই গণভোট হোক ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার দাবিতে। দেশের মানুষ যদি ইসলামি নীতির ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রশ্নে মতামত দেয়, তাহলে তা হবে জনগণের ঈমানি অবস্থানের প্রকাশ।”

তিনি আরও বলেন, ইসলাম এই দেশের মাটির সঙ্গে মিশে থাকা সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের ভিত্তি। দেশের জনগণ ন্যায়বিচার, কল্যাণ ও মানবিক সমাজব্যবস্থা চায়—যা ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। তাই তিনি গণভোটের মাধ্যমে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জনমত যাচাইয়ের আহ্বান জানান।

বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে “গণভোট” বিতর্ক

সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে “গণভোট” শব্দটি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। দেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল সাংবিধানিক সংস্কার ও ক্ষমতার ভাগাভাগির প্রশ্নে গণভোটের প্রস্তাব দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ছারছীনা পীরের বক্তব্য বিষয়টিকে এক ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে এসেছে। তিনি কেবল ক্ষমতা বা দলীয় রাজনীতির প্রশ্নে নয়, বরং দেশের নৈতিক পুনর্গঠনের লক্ষ্যেই ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার পক্ষে গণভোটের দাবি তুলেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য ইসলামী রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক তৈরি করতে পারে। কারণ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রশ্নে দেশে দীর্ঘদিন ধরে নানা মতভেদ রয়েছে।

ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার পক্ষে যুক্তি

পীর নেছারুদ্দীন আহমাদ হুসাইন বলেন, “আজ দেশের সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয়, দুর্নীতি, অবিচার ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাচ্ছে। এর একমাত্র সমাধান হলো রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শে পরিচালিত ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠা।”

তিনি মনে করেন, ইসলামি নীতিনির্ভর শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারলে জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে এবং সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। তরুণ প্রজন্মকেও তিনি ইসলামী মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

পীর বলেন, “ইসলামি তরুণদের এখন সময় এসেছে নৈতিকতার পতাকা হাতে নিয়ে ময়দানে নামার। অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে, এবং ইসলামের শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে জনগণের মধ্যে।”

গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বর্তমানে গণভোটের কোনো সরাসরি বিধান নেই। তবে অতীতে, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর আগ পর্যন্ত এই বিধান বিদ্যমান ছিল।
সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াতে ইসলামীসহ বেশ কয়েকটি ইসলামী দল গণভোটের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, জনগণের মতামতকে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্তে অন্তর্ভুক্ত করতে গণভোটই হতে পারে কার্যকর পদ্ধতি।

এই ধারাবাহিকতায় ছারছীনা পীরের আহ্বানকে অনেকেই ইসলামী অঙ্গনের নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। তার মতে, ইসলামি হুকুমত প্রতিষ্ঠার জন্য জনমতের প্রকাশ ঘটানোই দেশের ভবিষ্যৎ দিক নির্ধারণ করতে পারে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ

ধর্মভিত্তিক রাজনীতির পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ছারছীনা দরবার বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী সুফি দরবার। তাদের আধ্যাত্মিক অনুসারীর সংখ্যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লক্ষাধিক। ফলে পীরের এই আহ্বান রাজনৈতিক প্রভাবও ফেলতে পারে।

তবে কিছু বিশ্লেষক সতর্ক করেছেন যে, ধর্মীয় দাবির ভিত্তিতে গণভোটের আহ্বান সমাজে নতুন বিভাজনও তৈরি করতে পারে। তারা মনে করেন, ধর্মীয় আদর্শকে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার আগে রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো ও সংবিধানিক সীমারেখা বিবেচনা করা জরুরি।

রাজনৈতিক মহলে এই বক্তব্য নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, এই উদ্যোগ ইসলামী দলগুলোর ঐক্যকে আরও দৃঢ় করতে পারে, আবার কেউ আশঙ্কা করছেন এটি মূলধারার রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করবে।

মতামত: “গণভোটের দাবি নতুন মাত্রা যোগ করেছে”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশে গণভোটের দাবি নতুন কিছু নয়, তবে এবার বিষয়টি নৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তোলা হয়েছে, যা আলাদা গুরুত্ব বহন করে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “যখন রাজনৈতিক দলগুলো গণভোট নিয়ে ক্ষমতার সমীকরণ তৈরি করছে, ঠিক তখন ছারছীনা দরবারের পক্ষ থেকে ইসলামি হুকুমতের দাবিতে গণভোটের আহ্বান নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি সমাজে একটি নৈতিক আলোচনার সূচনা করবে।”

বাংলাদেশে ইসলামি আদর্শ ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সমন্বয় নিয়ে আলোচনা নতুন নয়। তবে ছারছীনা পীরের এই আহ্বান রাজনৈতিক পরিসরে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
তিনি বিশ্বাস করেন, জনগণ চাইলে ইসলামি নীতিনির্ভর রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। এখন দেখার বিষয়, এই আহ্বান রাজনৈতিক অঙ্গনে কতটা সাড়া ফেলে এবং দেশের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক চিন্তায় কী ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, গণভোট নিয়ে চলমান আলোচনার এই নতুন দিক ভবিষ্যৎ রাজনীতির ভাষা ও দিকনির্দেশনাতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

এম আর এম – ২১৮৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button