আঞ্চলিক

সুদের টাকার জন্য ৭ মাসের শিশুকে আটকে রাখল প্রতিবেশী, আটক ৪

Advertisement

গাইবান্ধা সদর উপজেলার কুপতলা ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে সুদের টাকা আদায়ের ঝগড়ায় ৭ মাসের এক শিশুকে আটকে রাখার ঘটনা সামনে এসেছে। অভিযুক্ত প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে শিশুটির পরিবারের মামলা দায়েরের পর পুলিশ ৪ জনকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।

ঘটনা ও অভিযোগের বিস্তারিত

শনিবার (৯ আগস্ট) দুপুরে দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল মতিনের ৭ মাসের কন্যা শিশুকে প্রতিবেশী সুজা মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন বাড়িতে নিয়ে যায়। অভিযোগ অনুযায়ী, মতিন কয়েকদিন আগে সুজার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা সুদে নিয়েছিলেন। শিশুটিকে বেড়ানোর কথা বলে নিয়ে যাওয়া হলেও পরবর্তীতে তাদের দাবি ছিল, যতদিন টাকা পরিশোধ হবে না ততদিন শিশুটিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।

শিশুটির পরিবার পাঁচবার শিশুকে ফেরত নিতে চেষ্টা করলেও প্রতিবারই ব্যর্থ হয়। এমনকি স্থানীয় ইউপি সদস্যের সাহায্য নেওয়ার পরও কোন সমাধান হয়নি। উল্টো শিশুটির পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।

পরিস্থিতি অব্যাহত থাকায় শিশুটির পরিবার ৯৯৯ জরুরি সেবায় ফোন করলে পুলিশ এসে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। শিশুটির মা ইসমোতারা বাদী হয়ে সুজা মিয়া ও তার পরিবারের চার সদস্যসহ মোট পাঁচজনের নামে মামলা করেছেন।

অভিযুক্তদের পরিচয় ও পুলিশি ব্যবস্থা

অভিযুক্তরা হলেন: দুর্গাপুর গ্রামের সুজা মিয়া (৪৫), তার স্ত্রী দুলালী বেগম (৪২), ছেলে দুলাল (২২) ও আলাল (১৮)। গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর আলম তালুকদার জানান, মামলা করা ৫ জনের মধ্যে চার জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রেখেছে এবং অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সুদের ব্যবসা ও বাড়তে থাকা সহিংসতা

বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় সুদের টাকার লেনদেনের কারণে বিভিন্ন সময়ে নানান সামাজিক ও আইনি জটিলতা দেখা যায়। বিশেষ করে উচ্চ সুদে টাকা আদায়ের সময় পারিবারিক বা প্রতিবেশীদের মধ্যে বিবাদ এবং সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সুদের টাকার জন্য শিশুকে আটকে রাখার, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনাও প্রকাশ পেয়েছে। এই ধরনের ঘটনা সমাজের নৈতিক অবক্ষয় এবং আইনের প্রতি অবজ্ঞার প্রতিফলন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

শিশুর পরিবার ও সমাজের প্রতিক্রিয়া

শিশুটির মা ইসমোতারা জানান, তিনি বারবার নিজের শিশুকে ফিরে পেতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু স্থানীয়দের সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়ে পুলিশ সাহায্য নিয়েছেন। তার অভিযোগ, অভিযুক্তরা শুধু সুদের টাকার জন্য এমন কুফল করেছে, যা মানবিকতার পরিপন্থী।

স্থানীয় ইউপি সদস্যও জানান, তারা অনেক চেষ্টা করেও সমস্যার মীমাংসা করতে পারেননি, কারণ অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে কিছু হামলার ঘটনা ঘটেছে। সমাজের মধ্যে এই ধরনের ঘটনা দ্রুত বন্ধ করার জন্য সবার সচেতনতা জরুরি।

আইনের দৃষ্টিভঙ্গি ও পরবর্তী ব্যবস্থা

আইন অনুযায়ী, এমন নিদারুণ মানবাধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর অধিকার রক্ষার জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন আইন কার্যকর রয়েছে। শিশু অধিকার সংরক্ষণ আইন ও দণ্ডবিধির প্রাসঙ্গিক ধারায় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।

পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সচেতনতা এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া না নেওয়া হলে সমাজে এমন সমস্যা বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সুদের ব্যবসা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমাধান

সুদ থেকে মুক্তি পেতে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সরকারি পদক্ষেপ অপরিহার্য। মাইক্রোফাইনান্স প্রতিষ্ঠানগুলোও সুদের হার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে। পাশাপাশি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে যাতে কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে সাহস না পায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা সমাজের জন্য এক বিরাট সতর্কতা সঙ্কেত। আমাদের উচিত মানবিক মূল্যবোধকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

সারসংক্ষেপ  

গাইবান্ধায় ৭ মাসের শিশুকে আটকে রাখার এই ঘটনা শুধু একজন শিশুর নয়, পুরো সমাজের জন্য উদ্বেগের। সুদের লেনদেনের নামে এমন নিষ্ঠুরতা যেন আর না ঘটে, সেটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। আগামী দিনগুলোতে প্রশাসন ও সমাজের সচেতনতার মাধ্যমে শিশুর নিরাপত্তা ও মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে একটি কঠোর বার্তা দিতে পারে যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে পরিস্থিতি কীভাবে গড়াবে, তা নির্ভর করছে আগামী পদক্ষেপের ওপর।

এম আর এম – ০৭৭২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button