বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান সোমবার (১০ নভেম্বর) রাতে ঢাকা-১৫ আসনের পূর্ব সেনপাড়ায় অনুষ্ঠিত একটি সমাবেশে জানিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টা করা হবে। তিনি বলেন, যদি কোনো কোম্পানি এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকার তাদের তিন ঘণ্টার ভর্তুকি দেবে। তবে কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে নারীরা যদি ঘরে সময় দেন, সরকার সেসব নারীকে সম্মানিত করবে।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, সমাজের ময়লা ও আবর্জনা পরিষ্কার করতে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। তিনি এটিকে একটি ‘সমাজ সংস্কারের যুদ্ধ’ আখ্যায়িত করেছেন এবং যুবকদের আহ্বান জানিয়েছেন এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে।
কর্মক্ষেত্রে নারীর সময় নির্ধারণের ঘোষণা
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “নারীদের জন্য কর্মক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় কমিয়ে পাঁচ ঘণ্টা করা হবে। যদি কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকার তাদের তিন ঘণ্টার সমতুল্য ভর্তুকি প্রদান করবে।” তিনি জানান, কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে ঘরে সময় দেওয়া নারীদের সরকার সম্মানিত করবে, যা নারীর স্বীকৃতি ও মর্যাদা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
এই ঘোষণা সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে নারীর অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিয়ে এটি নতুন বিতর্কের সূচনা করতে পারে।
সমাজ সংস্কার ও যুবকের ভূমিকা
ডা. শফিকুর রহমান সমাবেশে বলেন, “ঘুনেধরা সমাজকে পরিবর্তন করতে আমাদের একটি ঝাঁকুনি দেওয়া প্রয়োজন। সমাজের ময়লা ও আবর্জনা পরিষ্কার করতে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে।” তিনি বলেন, সমাজ সংস্কারের লক্ষ্য পূরণে যুবকদের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যুবকরা সোনালি সমাজ গঠনে এগিয়ে আসবেন এবং এই প্রচেষ্টার মূল চালক হবেন।
এই অংশটি রাজনৈতিক দলের সামাজিক দায়িত্ববোধের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সমাজ সংস্কারের উদ্যোগ, বিশেষ করে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে যুবকদের অংশগ্রহণকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
শিশুর অধিকার ও সরকারের দায়িত্ব
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “সব শিশুর মধ্যে কোনো ভেদাভেদ করা হবে না। কোন শিশু কোন পরিবারে জন্মেছে তার ওপর ভিত্তি করে ভেদাভেদ করা হবে না। সব শিশুকে সমান অধিকার প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, নির্বাচিত হলে সমস্যা সমাধানের জন্য সরাসরি জনগণের কাছে আসা হবে এবং অগ্রাধিকার অনুসারে সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে। এটি সরকারের নাগরিক-কেন্দ্রিক কাজের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
জামায়াতের এই ঘোষণা সামাজিক ও রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। নারীদের কর্মক্ষেত্রে সময় হ্রাস ও ঘরে সময় দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি সম্মান প্রদানের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন যে, বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে।
কর্মক্ষেত্রে নারী অংশগ্রহণ এবং ঘরে অবস্থানের মধ্যে সঠিক সমন্বয় নিশ্চিত করতে সরকারের পরিকল্পনা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হবে কি না, তা এখনও অজানা। এছাড়াও, সমাজ সংস্কার ও আবর্জনা পরিষ্কারের উদ্যোগে জনসাধারণের অংশগ্রহণ কতটা সম্ভব হবে, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
জামায়াতের এই ঘোষণাকে রাজনৈতিক রণনীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে নারীর কল্যাণ, যুবকদের অংশগ্রহণ ও সমাজ সংস্কারের বিষয়গুলো সামনে আনা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নারীর কর্মক্ষেত্রে সময় সংক্রান্ত এই প্রস্তাব নির্বাচনী ভোটাভুটিতে দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। তবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ও নীতিগত বাধা এড়ানো সহজ হবে না।
ডা. শফিকুর রহমানের এই ঘোষণার মাধ্যমে নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও ঘরে অবস্থানের মধ্যে একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। সমাজ সংস্কার ও যুবকদের দায়িত্বশীল অংশগ্রহণের আহ্বানও একইসঙ্গে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রতিশ্রুতি কতটা কার্যকর হবে এবং সমাজে এর বাস্তব প্রভাব কতদূর পৌঁছাবে, তা প্রধানত সরকারের কার্যকর বাস্তবায়ন ও নাগরিকদের অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ২১৭৫,Signalbd.com



