কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—রাজধানীতে এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছিলেন তারা।
গ্যাস বেলুন উড়িয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির পরিকল্পনা
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের নয়টি বিভাগ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, এই ব্যক্তিরা “এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়িয়ে” জনমনে আতঙ্ক ছড়ানোর এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পরিকল্পনা করছিলেন।
ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা হুমকির অভিযোগে মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি বলেন, “গ্রেফতার ব্যক্তিরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল, উসকানিমূলক স্লোগান ও বেলুন উড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল। নাশকতা প্রতিরোধে ডিবির অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
কোন কোন এলাকা থেকে গ্রেফতার
ডিবির নয়টি বিভাগ—মিরপুর, রমনা, সাইবার, মতিঝিল, ওয়ারী, উত্তরা, তেজগাঁও, লালবাগ ও গুলশান—এ অভিযানে অংশ নেয়।
শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত পৃথক সময়ে এসব বিভাগ সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে ২৫ জনকে আটক করে।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ গোপন বৈঠকের মাধ্যমে কর্মসূচি সমন্বয়ের চেষ্টা করছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে বলে জানায় ডিবি সূত্র।
গ্রেফতার নেতাদের পরিচয়
ডিবি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন—নওপাড়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি রূপচান বেপারী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের বিজ্ঞান বিষয়ক সম্পাদক আবরার খান তাহমিদ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য রায়হান খান আজাদ, শেরেবাংলা নগর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ এ বি এম নুরুল হক (ছোটন চৌধুরী), শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ (বাবলু), মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য গিয়াস উদ্দিন খোকন, মিরপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া, যুবলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম, শ্রমিক লীগ নেতা জসিম (বিল্লাল) এবং মৎস্যজীবী লীগ নেতা মাহবুব রহমান।
এছাড়া কুমিল্লা, শরীয়তপুর, হবিগঞ্জ, নোয়াখালী, নেত্রকোণা, সিলেট, বরগুনা ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতাকর্মীরা রাজধানীতে এসে এ পরিকল্পনায় অংশ নেন বলে জানিয়েছে ডিবি।
ডিবির বক্তব্য: “আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অভিযান চলবে”
উপ-পুলিশ কমিশনার তালেবুর রহমান বলেন, “রাষ্ট্রবিরোধী কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই তা প্রতিহত করা ডিবির দায়িত্ব। রাজধানীতে জননিরাপত্তা বিঘ্ন ঘটানোর আশঙ্কা থাকায় অভিযান চালানো হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, “রাজধানীর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে।”
নিষিদ্ধ কার্যক্রম ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
গত কয়েক মাস ধরেই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজধানীতে গোপন বৈঠক ও কর্মসূচি পরিকল্পনার অভিযোগ উঠছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যে কোনো সংগঠন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে এমন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে “এক লাখ গ্যাস বেলুন” উড়ানোর পরিকল্পনা নিরাপত্তা সংস্থার কাছে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতামত
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা শামসুল হক বলেন, “গ্যাস বেলুন উড়ানোর মতো সাধারণ কার্যক্রমও যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বা উসকানিমূলকভাবে ব্যবহৃত হয়, তা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “ডিবির দ্রুত পদক্ষেপই প্রমাণ করে, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা রক্ষায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এখন অনেক বেশি প্রস্তুত।”
গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া শুরু
ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে পৃথক থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে পূর্বেও রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল।
পুলিশের দাবি, তদন্তের মাধ্যমে জানা যাবে, পরিকল্পনার পেছনে আর কারা জড়িত ছিলেন এবং কোথা থেকে এই উদ্যোগের অর্থায়ন হয়েছে।
তদন্তে নতুন তথ্য আসার অপেক্ষা
রাজধানীতে এক লাখ গ্যাস বেলুন উড়ানোর পরিকল্পনা ঘিরে আলোচনার ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। কেউ একে অরাজনৈতিক সাংস্কৃতিক উদ্যোগ বললেও, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মতে এটি ছিল পরিকল্পিত বিশৃঙ্খলার প্রচেষ্টা।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে ডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তার হুমকি দূর না হয়, অভিযান চলবে।”
এম আর এম – ২১৫৩,Signalbd.com



