বাংলাদেশ

কুমিল্লায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল, গ্রেফতার ৪৫

Advertisement

কুমিল্লা শহরে গতকাল দুপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের একটি ঝটিকা মিছিলের ঘটনায় চারপাশে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ অভিযান চালিয়ে মোট ৪৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় থানা এলাকা থেকে কুমিল্লা জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক শের এ আলমসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের একস্থানে জড়ো হয়ে হঠাৎ মিছিল চালায়। তারা গ্রেফতার এড়ানোর জন্য কিছু নেতাকর্মী বিএনপির কর্মসূচিতে যোগ দেয়ার ভানও করেছিল। তবে পরে পুলিশের নজরদারিতে তাদের কার্যক্রম ধরা পড়ে।

মিছিলের সময় উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় পুলিশ অতিরিক্ত মোতায়েন করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কয়েকটি যানবাহনে ভাঙচুর করা হয় এবং কিছু স্থানে আগুনের ছোঁয়া লাগানোর চেষ্টা করা হয়। তবে পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, “আমরা আগেই খবর পেয়েছিলাম যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। গ্রেফতার করা নেতাকর্মীরা ঢাকার নির্দেশে মহাসড়কে অগ্নিসংযোগ ও গাড়ি ভাঙচুরের পরিকল্পনা করেছিল। তাদের কাছ থেকে কিছু আগুন ধরানোর সরঞ্জামও জব্দ করা হয়েছে।”

গ্রেফতারকৃতদের পরিচয়

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে কুমিল্লা জেলা শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক শের এ আলম, কয়েকজন স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পরিচিত মুখ এবং কিছু নবীন নেতাকর্মী রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় রাখা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কিছু নেতাকর্মী শনাক্ত করা হচ্ছে এবং তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “আমরা দুপুরে হঠাৎ বিশাল কিছু মানুষকে মহাসড়কে মিছিল করতে দেখে ভীত ও আতঙ্কিত হয়েছিলাম। শিশু এবং বৃদ্ধরা সড়ক পারাপারে সমস্যায় পড়েছিল। আমরা চাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষা হোক।”

একাধিক ব্যবসায়ীও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, “এ ধরনের উগ্র কর্মকাণ্ড আমাদের ব্যবসা ও সাধারণ জীবনযাত্রাকে বিঘ্নিত করে। পুলিশ যে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে, সেটি প্রশংসনীয়।”

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে ছাত্ররাজনীতির প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে বহুল পরিচিত। তবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনগুলো এখনো বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রীয় নির্দেশে প্ররোচিত হয়ে স্থানীয় কার্যক্রম চালানোর ঘটনা দেশব্যাপী একটি উদ্বেগের বিষয়।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, “নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রায়ই রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করে। এটি শুধুমাত্র স্থানীয় জনজীবনকে বিপর্যস্ত করছে না, বরং আইনশৃঙ্খলার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”

পুলিশের করণীয় ও পরিস্থিতি

গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, “আমরা পুরো এলাকা ঘিরে রাখব এবং যে কোনো ধরনের নাশকতার প্রচেষ্টা রোধ করব। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।”

স্থানীয় প্রশাসনও সাধারণ মানুষকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের যাত্রীদের জন্য সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

পুলিশ ও প্রশাসন জানিয়েছে, তারা এই ধরনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় থানা ও জেলা প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং চালাবে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর কার্যক্রম কেবল স্থানীয় নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

সমাপনী মন্তব্য

কুমিল্লায় ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল এবং ৪৫ নেতাকর্মীর গ্রেফতারের ঘটনা শুধু স্থানীয় নয়, বরং দেশের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও প্রশাসনের সক্রিয় পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের আস্থা বৃদ্ধি করেছে।

এই ঘটনার ফলে বোঝা যাচ্ছে, রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে সতর্ক থাকা এবং সময়মতো প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া কতটা জরুরি।

MAH – 13670 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button