বাংলাদেশ

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

Advertisement

নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করা এক ব্যক্তির করা মামলায় ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। আদালত শাহবাগ থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার সারসংক্ষেপ

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মারধর, নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বাদী জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তি নিজেকে ‘জুলাই যোদ্ধা’ দাবি করে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুজ্জামানের আদালতে এ মামলা করেন।

আবেদনের শুনানি শেষে আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার বাদী জাহাঙ্গীরের দাবি, ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তারা তাকে অন্ধকার কক্ষে নিয়ে নির্যাতন করেছেন এবং ভুয়া জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকারোক্তি দিতে চাপ দিয়েছেন।

অভিযুক্তদের নাম ও পরিচয়

মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন — সাইদুর রহমান শাহিদ, সাগর, ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভেরিফিকেশন অফিসার ইফতেখার হোসেন, কর্মকর্তা আফজালু রহমান সায়েম, এক্সিকিউটিভ মেম্বার সাবরিনা আফরোজ শ্রাবন্তী, সোনিয়া আক্তার লুবনা (নারায়ণগঞ্জ), ফাতেমা আফরিন পায়েল, কর্মকর্তা আলিফ, মেহেদী হাসান প্রিন্স ও জাহিদ।
সবাই জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত বলে জানা গেছে।

বাদীর অভিযোগের বিবরণ

জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত বছরের ১৮ জুলাই কাঁচপুর ব্রিজ এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হন। চলতি বছরের ২৭ মে দুপুরে তিনি অনুদানের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ ফাউন্ডেশনের অফিসে যান। সেখানে আসামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তাকে একটি আলোবিহীন কক্ষে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন শুরু করা হয়।

তার ভাষ্য অনুযায়ী, সাইদুর রহমান শাহিদ ও অন্যরা তাকে লোহার পাইপ দিয়ে মাথায় আঘাত করেন, যার ফলে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। জ্ঞান ফেরার পর আবারও মারধর করা হয় এবং তাকে ভুয়া জুলাই যোদ্ধা হিসেবে স্বীকার করার জন্য জোরাজুরি করা হয়।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং ফেসবুক পোস্ট ও ছবিগুলো দেখে বিএনপি নেতার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এরপর জোর করে হাতে ইনজেকশন পুশ করে অচেতন অবস্থায় তাকে বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ খানপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান।

আদালতের নির্দেশ ও তদন্তের অগ্রগতি

মামলার শুনানিতে আদালত বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং তদন্তের দায়িত্ব দেন শাহবাগ থানাকে। আদালতের নির্দেশে ওসি তদন্ত করে আগামী নির্ধারিত তারিখে প্রতিবেদন জমা দেবেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী ইলতুৎমিশ সওদাগর জানান, “আমার মক্কেল একজন প্রকৃত জুলাই যোদ্ধা। তিনি অনুদানের জন্য আবেদন করতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।”

অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অভিযোগ প্রাথমিকভাবে গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের ভূমিকা ও বিতর্ক

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন একটি বেসরকারি সংগঠন, যারা জুলাই মাসের শহীদদের স্মরণে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে সংগঠনটির নাম ঘিরে এর আগে কয়েকটি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
কিছু অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি আসল জুলাই যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের বাইরে থেকেও সদস্যপদ ও সনদ প্রদান করে থাকে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করলেও সাম্প্রতিক মামলাটি নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছেন, প্রকৃত জুলাই যোদ্ধাদের সম্মান রক্ষায় বিষয়টি নিরপেক্ষভাবে তদন্ত হওয়া জরুরি।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য

ঘটনার দিন অফিসের কাছাকাছি এলাকায় উপস্থিত কিছু প্রত্যক্ষদর্শী জানান, দুপুরের দিকে এক ব্যক্তিকে অচেতন অবস্থায় অফিসের বাইরে ফেলে যেতে দেখা যায়। পরে কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।

একজন স্থানীয় দোকানদার বলেন, “একজন মানুষকে গাড়ি থেকে নামিয়ে অফিসের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়, কিছুক্ষণ পরেই তাকে অচেতন অবস্থায় বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে কিছুক্ষণ তদন্ত করে।”

মামলার গুরুত্ব ও সম্ভাব্য প্রভাব

আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মামলা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নির্যাতনের অভিযোগ নয়, বরং ফাউন্ডেশনের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলবে।
অ্যাডভোকেট মাহবুব হোসেন বলেন, “যদি আদালতের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে শুধু আসামিরা নয়, পুরো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অপরদিকে, যদি অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়, তবে বাদীর বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ আনা হতে পারে।”

এছাড়া তদন্তের ফলাফল অনুযায়ী ফাউন্ডেশনের নিবন্ধন ও কার্যক্রমেও প্রশাসনিক পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন। বাদীর গুরুতর অভিযোগ ও ফাউন্ডেশনের নীরব অবস্থান—দুটিই জনমনে কৌতূহল সৃষ্টি করেছে। আদালতের নির্দেশে পুলিশ প্রতিবেদন জমা দিলে মামলার পরবর্তী ধাপ নির্ধারিত হবে। তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মামলার সুষ্ঠু তদন্তই নির্ধারণ করবে—এটি ব্যক্তিগত বিরোধ নাকি বৃহত্তর কোনো অনিয়মের ইঙ্গিত।

এম আর এম – ২১১৪,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button