ইসরায়েল গাজা সিটিতে স্থল অভিযান শুরু করেছে। হামাস এক বিবৃতিতে এই অভিযানকে ‘বর্বরতাপূর্ণ আগ্রাসন’ আখ্যা দিয়েছে এবং এর দায়ভার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপিয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যেখানে বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
স্থল অভিযানের বিস্তারিত
মঙ্গলবার ভোর থেকে গাজার শহরের উপকণ্ঠে ইসরায়েলি স্থল অভিযান শুরু হয়েছে। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ধাপে ধাপে হামাসের শেষ ঘাঁটিগুলোতে প্রবেশ করছে। এর আগে, শহরের বেসামরিক এলাকায় বিমান হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস করা হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ জানিয়েছেন, এই অভিযান জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করার জন্য পরিচালিত হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের কিছু অংশই খালি করা সম্ভব হয়েছে, তবে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষ এখনো অবস্থান করছেন।
গাজায় ইসরায়েলি স্থল অভিযান নতুন নয়। প্রায় দুই বছর ধরে চলমান সংঘাতে ইসরায়েল গাজার বিভিন্ন এলাকায় বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে আসছে। গত মাসে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হলো হামাসকে পরাজিত করে শহরের পুরো নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা।
জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর জাতিগত নিধন চালাচ্ছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
শহরে চলমান অভিযান ও বিমান হামলার কারণে বেসামরিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত অন্তত ৩৮ জন নিহত হয়েছেন। ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ি, পানিসঙ্কট, বিদ্যুৎ সমস্যা এবং স্বাস্থ্যসেবা বিঘ্নিত হওয়ায় সাধারণ ফিলিস্তিনিরা চরম কষ্টে পড়েছেন।
হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই আগ্রাসনের দায়ভার যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বর্তায়। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি, তারা যুক্তরাষ্ট্রকে মূল সহযোগী হিসেবে বিবেচনা করছে। হামাস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
মানবিক সংকট
স্থল অভিযান ও বেসামরিক মানুষদের ওপর হামলার কারণে মানবিক বিপর্যয় তীব্র হচ্ছে। প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি ইতিমধ্যেই গাজা শহর ত্যাগ করেছে। অবরুদ্ধ শহরে খাবার, পানি ও স্বাস্থ্যসেবার সংকট বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই অভিযান স্থায়ী নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে মানবিক সংকট আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ বেড়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ প্রথমবারের মতো ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে “জাতিগত নিধনের” লক্ষণ হিসেবে উল্লেখ করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক নেতারা দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই স্থল অভিযান এবং বিমান হামলা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়াবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, মানবিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।
বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েলি স্থল অভিযান শুধুমাত্র সামরিক লক্ষ্য পূরণ করছে না, বরং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর চাপ বৃদ্ধি করছে। এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, “এই অভিযান মানবিক সংকটকে আরও গভীর করবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ অপরিহার্য।”
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলি সতর্ক করে বলছে, এই সংঘাত গাজা অঞ্চলে রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান ও হামাসের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক মানচিত্রে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। হামাস যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ভার নিতে বললেও, মানবিক সংকট এবং বেসামরিক লোকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সংঘাতের ভবিষ্যত নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক চাপের ওপর। যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তবে গাজার মানবিক ও রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর আকার ধারণ করবে।
এম আর এম – ১৩৭৮,Signalbd.com



