ডেঙ্গুতে আজ সর্বোচ্চ মৃত্যু ১০, সরকারি অবহেলার পরিণতি বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১০ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি অবহেলার কারণে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুগুলো ঘটেছে।
২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু
দেশে চলতি বছরের মধ্যে এক দিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১০ জনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৬৯ জন রোগী।
এর মধ্যে ঢাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মারা গেছেন ৫ জন, ঢাকা উত্তর সিটিতে ৩ জন। এছাড়া একজন করে মারা গেছেন বরিশাল ও খুলনা বিভাগে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে ৩০২ জনে।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেড়ে গেছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালে ৪০৮ জন ভর্তি হয়েছেন। ঢাকার বাইরে সর্বোচ্চ সংক্রমণ দেখা গেছে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলায়, যেখানে ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মৃত্যু প্রতিরোধযোগ্য ছিল। তারা অভিযোগ করছেন, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষরা যথাযথ ব্যবস্থা নেননি।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “প্রতিটি মৃত্যু সরকারি অবহেলার পরিণতি। যদি চিকিৎসা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীভূত করা হতো এবং রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা সহজলভ্য হতো, তাহলে এই মৃত্যু এড়ানো যেত।”
বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, চলতি বছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত পর্যাপ্ত বৃষ্টি ও উষ্ণ আবহাওয়া এডিস মশার প্রজননের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
হাসপাতাল পরিস্থিতি
ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য দেশের হাসপাতালগুলোতে চাপ বেড়ে গেছে। ঢাকায় কুর্মিটোলা জেনারেল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ল্যাবএইড হাসপাতালে ১০ জনের মধ্যে অধিকাংশ রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ঢাকার বাইরে, ভোলা ও খুলনায় দুটি মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৪ হাজার ৯৯২ জনে। বিশেষ করে বরিশাল বিভাগে সেপ্টেম্বর মাসে এক দিনে সর্বোচ্চ ১২৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সরকারি অবহেলার দায়িত্ব
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকারের যথাযথ তৎপরতার অভাব এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর শুধু জ্বর হলে ডেঙ্গুর পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে, কিন্তু সহজ ও কম খরচে রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এছাড়া, পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলো ভেঙে দেওয়ার ফলে মশকনিধন এবং পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি স্থানীয় সরকার কার্যক্রম সচল থাকতো, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসতো।
ডেঙ্গু সংক্রমণের পরিসংখ্যান
চলতি বছরের শুরু থেকে, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তির তথ্য নিম্নরূপ:
- জানুয়ারি: ১,১৬১ জন
- ফেব্রুয়ারি: ৩৭৪ জন
- মার্চ: ৩৩৬ জন
- এপ্রিল: ৭০১ জন
- মে: ১,৭৭৩ জন
- জুন: ৫,৯৫১ জন
- জুলাই: ৪১ জন
- অগাস্ট: ১০,৪৯৬ জন
- সেপ্টেম্বর: ১৫,৮৬৬ জন
- অক্টোবর: ২২,০৫০ জন
মৃত্যুর সংখ্যাও একইভাবে বাড়ছে। অক্টোবর মাসে ৮০ জন মারা গেছেন, সেপ্টেম্বর মাসে ৭৬ জন। এর আগে, আগস্টে ৩৯ জন এবং জুলাইয়ে ৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
ডা. মুশতাক হোসেন ও অন্যান্য জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের পরিকল্পনাগত উদাসীনতা মৃত্যুর মূল কারণ। স্থানীয় সরকার কার্যক্রম সচল রাখলে মশা নিয়ন্ত্রণ সহজ হতো। স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও দ্রুত রোগনির্ণয় ব্যবস্থা প্রয়োজন।”
তারা আরও বলছেন, দেশের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিলে ভবিষ্যতে এ ধরনের মৃত্যু কমানো সম্ভব।
ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা সরকারের অবহেলার কারণে ঘটেছে বলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ, স্থানীয় সরকার কার্যক্রমের অভাব এবং রোগনির্ণয় ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা এই সংকটকে তীব্র করেছে।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, দ্রুত মশা নিয়ন্ত্রণ, পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি, স্থানীয় সরকার কার্যক্রম সচলকরণ এবং রোগনির্ণয় ব্যবস্থা উন্নত করা জরুরি। না হলে চলতি বছরের মতো মৃত্যু ও সংক্রমণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
এম আর এম – ২১০৫,Signalbd.com



