বাংলাদেশ

পুলিশের কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষ নিলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

Advertisement

নির্বাচনকে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল করার আহ্বান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশনা

আসন্ন নির্বাচনে পুলিশকে নিরপেক্ষ থাকার কড়া নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। কেউ কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

বৈঠকের পর ঘোষণার বিস্তারিত

আজ মঙ্গলবার সকালে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নেন।

বৈঠকে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল:

  • আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচন
  • আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি
  • সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য
  • লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার
  • পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর দায়িত্ব

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,

“ইলেকটোরাল ইনকোয়ারি কমিটি করেছি আমরা। কারও কোনো ধরনের নেগলিজেন্স থাকলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে। নির্বাচনে পুলিশকে পুরোপুরি ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল ও উৎসবমুখর রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা

বিগত নির্বাচনে বিভিন্ন ওসি ও কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, প্রথমে যাদের তিনটি নির্বাচনে দায়িত্ব ছিল তাদের পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হবে। এরপর যাদের দুটি নির্বাচনে জড়িত ছিলেন, তাদের নিয়েও প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তবে তিনি সীমাবদ্ধতা থাকার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “নতুন ওসি নিয়ে আসতে আমাদের সবসময় সুবিধা নেই। তবে যারা এক নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং অভিযোগবিহীন, তাদের কাজে ব্যবহার করতে হবে।”

পালিয়ে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের পরিস্থিতি

জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে থাকা পুলিশের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, “দেশের বাইরে যাঁরা আছেন, তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া তদারকির মধ্যে রয়েছে।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও উসকানিমূলক বক্তব্য

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, দেশের শান্তি ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করার জন্য দেশে ও দেশের বাইরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। তিনি সতর্ক করেছেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

রাউজান ও ফটিকছড়ি এলাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১১টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, পাহাড়ি এলাকায় অপরাধীরা লুকিয়ে থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, “যদি চুরি হওয়া অস্ত্র পাওয়া যায়, কার মাধ্যমে হয়েছে এবং কে দায়ী, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।”

সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা ও নিরাপত্তা বিষয়ক মন্তব্য

নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকবে কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সেনাবাহিনীর বিচারিক ক্ষমতা সক্রিয় আছে এবং নির্বাচনের সময় এটি বন্ধ করা হবে না।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গত ১৪ মাসে ৪০টির মতো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তথ্য এসেছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “নিরাপত্তা বাহিনী বা যেকোনো বাহিনীর মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড হোক না কেন, প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে এবং আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে।”

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখার জন্য পুলিশের দায়িত্ব গুরুত্বপূর্ণ। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সরাসরি হুঁশিয়ারি ও কঠোর পদক্ষেপ নির্বাচনী সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের ঘোষণার মাধ্যমে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে দূরে রাখা সম্ভব হবে। তবে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ের সাথে প্রমাণিত হবে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ঘোষণা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, নির্বাচনে পুলিশকে কোনো প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিতে দেওয়া হবে না। নির্বাচনের ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই নির্দেশনা নির্বাচনকে আরও স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর করবে। তবে বাস্তবায়ন কতটা কার্যকর হবে, তা নির্বাচন কার্যক্রমের অগ্রগতিতে স্পষ্ট হবে।

এম আর এম – ২০৯৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button