আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ইসলামী চিন্তাবিদ এবং মানবতাবাদী সংগঠক ড. জাকির নায়েক আগামী ২৮ নভেম্বর দুই দিনের জন্য বাংলাদেশে আসতে পারেন, এমনটাই জানা গেছে। এ খবর সামনে আসার পরেই ঢাকার একদল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। স্মারকলিপিতে তারা দাবি করেছেন, ড. জাকির নায়েকের অসামান্য অবদান ও মানবকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট ডিগ্রি’ প্রদান করা হোক।
সোমবার (৩ নভেম্বর) ঢাবিতে স্মারকলিপি প্রদান শেষে শিক্ষার্থীরা আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানান, ড. জাকির নায়েক শুধুমাত্র ইসলামের প্রচারক নন, তিনি একজন বিশ্বমানের মানবতাবাদী এবং শিক্ষাবিদ, যিনি বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী এবং দরিদ্র মানুষের কল্যাণে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন।
শিক্ষার্থীদের বক্তব্য, “ড. জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠিত ‘ইউনাইটেড এইড’ সংস্থার মাধ্যমে সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি, প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা পাচ্ছে। তার এই মানবিক কর্মকাণ্ড তাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে মানবতার প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।”
শিক্ষার্থীদের দাবি: বাংলাদেশের মর্যাদা উজ্জ্বল হবে
ঢাবি শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, “ড. জাকির নায়েককে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেওয়া হলে তা কেবল একজন আন্তর্জাতিক ইসলামী চিন্তাবিদকে সম্মানিত করা হবে না, বরং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও মর্যাদাকেও আন্তর্জাতিক মঞ্চে উজ্জ্বল করবে। আমরা বিশ্বাস করি, জ্ঞানচর্চা, মানবকল্যাণ ও ইসলামী চিন্তাধারার ক্ষেত্রে তার অবদান অনন্য।”
তাদের মতে, যদিও ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সরকারের ষড়যন্ত্রের কারণে ড. নায়েককে দেশত্যাগ করতে হয়েছে, কিন্তু মালয়েশিয়া তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছে। “এ ধরনের একজন বিশ্বমানের মানবতাবাদী ও জ্ঞানচর্চার প্রতীক বাংলাদেশে স্বাগত পাওয়া উচিত,” শিক্ষার্থীরা বলেন।
আন্তর্জাতিক বিতর্ক: ভারতের দাবি, বাংলাদেশের অবস্থান
ড. জাকির নায়েকের বাংলাদেশ সফর নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বিতর্কও দেখা দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, “যদি তিনি ঢাকায় আসেন, তবে তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হোক।”
বিডি কূটনীতির জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, কোনো দেশের অভিযুক্ত বা পলাতক ব্যক্তিকে অন্য দেশের শরণ দেওয়া উচিত নয়। তবে এটি আন্তর্জাতিক আইনের আলোকে বিবেচনা করা হবে।”
এই প্রসঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “ড. জাকির নায়েককে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেওয়া বা তাকে স্বাগত জানানো বাংলাদেশের শিক্ষা ও মানবিক মর্যাদার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে আন্তর্জাতিক কূটনীতির দিক থেকেও বিষয়টি সংবেদনশীল।”
ড. জাকির নায়েকের মানবতাবাদী কর্মকাণ্ড
ড. জাকির নায়েকের নামের সঙ্গে মানবিক ও শিক্ষামূলক বিভিন্ন উদ্যোগ জড়িত। তিনি ইসলামী শিক্ষা ও মানবকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
- ইউনাইটেড এইড: ড. নায়েকের প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি মানবিক সহায়তা প্রদান করে।
 - শিক্ষাবৃত্তি প্রদান: বিশ্বের দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছেন।
 - স্বাস্থ্য ও জরুরি সহায়তা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়কালে আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
 - আন্তর্জাতিক সম্মাননা: বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে তার মানবিক অবদান স্বীকৃত।
 
শিক্ষার্থীরা মনে করেন, “এ ধরনের একজন অন্তর্জাতিক মানবতাবাদী ও ইসলামী চিন্তাবিদকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দিয়ে ঢাবি শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা যায় এবং দেশের শিক্ষাব্যবস্থার মর্যাদা আরও দৃঢ় করা সম্ভব।”
ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও সাড়া
ড. জাকির নায়েকের ডক্টরেট দাবি নিয়ে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন দেখা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও শিক্ষাব্যবস্থার শিক্ষার্থীরা সোশ্যাল মিডিয়া, ফোরাম এবং সভার মাধ্যমে এই দাবি নিয়ে সক্রিয়।
শিক্ষার্থীরা বলেন, “ড. নায়েকের অবদান শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষা বা প্রচার সীমাবদ্ধ নয়। তার কার্যক্রম সমাজের উন্নয়ন, দরিদ্র ও অসহায়দের সহায়তা, এবং আন্তর্জাতিক মানবিক কাজের সঙ্গে জড়িত। এ কারণে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেওয়া উচিত।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটি কেবল ঢাবি নয়, বাংলাদেশের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ও কূটনৈতিক ঘটনা হতে পারে। এ ধরনের উদ্যোগ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক মানবিক অবস্থানকে দৃঢ় করবে।
সমালোচনা ও বিতর্ক
ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছু সমালোচনাও রয়েছে। ভারতের সরকার তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনেছে, যার কারণে আন্তর্জাতিক বিতর্ক রয়েছে। তবে শিক্ষাবিদরা মনে করেন, “বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার মান এবং মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।”
একই সঙ্গে, কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, “যদি ড. নায়েককে বাংলাদেশে ডক্টরেট দেওয়া হয়, তবে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং কূটনীতিতে তা প্রভাব ফেলতে পারে।” তবে শিক্ষার্থীদের মতে, মানবিক ও শিক্ষামূলক দিকটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি
ঢাবি শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করেছেন, তারা ড. জাকির নায়েকের সফরকে শিক্ষা, মানবিকতা ও আন্তর্জাতিক মর্যাদার উদযাপন হিসেবে দেখবে। তারা নিশ্চিত করেছেন, সব ধরনের সম্মানসূচক অনুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে সুন্দরভাবে সম্পন্ন হবে।
“আমরা আশা করি, ড. নায়েকের বাংলাদেশ সফর শুধু তার কাজের স্বীকৃতি হবে না, বরং বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এবং মানবিক মূল্যবোধকে আন্তর্জাতিক মানচিত্রে তুলে ধরবে,” সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন।
সংক্ষেপে
- ড. জাকির নায়েক দুই দিনের জন্য ২৮ নভেম্বর ঢাকা সফর করতে পারেন।
 - ঢাবি শিক্ষার্থীরা তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেওয়ার দাবি করেছেন।
 - শিক্ষার্থীরা তার মানবিক ও শিক্ষামূলক অবদান তুলে ধরেছেন।
 - ভারতের পক্ষ থেকে গ্রেপ্তার দাবি, বাংলাদেশ কূটনীতির মাধ্যমে বিষয়টি দেখবে।
 - তার প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ইউনাইটেড এইড আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
 - ঢাবি শিক্ষার্থীরা মনে করেন, সম্মানসূচক ডক্টরেট দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
 
MAH – 13611 I Signalbd.com
				
					


