বাংলাদেশ

জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে অনৈক্যের সুর, সংশয়ে জাতীয় নির্বাচন?

Advertisement

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নতুন পরিবর্তনের মুখে পড়েছে। সম্প্রতি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চূড়ান্ত ‘জুলাই জাতীয় সনদ’ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতানৈক্য বাড়ায় আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনাকে সংশয়ের মুখে ফেলেছে।

ঘটনার বিস্তারিত

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫’-এর চূড়ান্ত সুপারিশমালা জমা দেয়। এই সনদে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার, ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কমিশন সুপারিশ করেছে, সনদ বাস্তবায়নের জন্য জনগণের সরাসরি সম্মতি নেওয়ার জন্য একটি সাংবিধানিক গণভোট আয়োজন করা হবে। কমিশন আরও বলেছে, যদি সংবিধান সংস্কার পরিষদ নির্ধারিত ২৭০ দিনের মধ্যে তাদের দায়িত্ব সম্পাদন করতে না পারে, তাহলে গণভোটে পাস হওয়া বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হবে।

রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া

বিএনপি কমিশনের সুপারিশে সমর্থন না জানিয়ে জানিয়েছে, সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। বিএনপি মনে করছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজন অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। দলটি দাবি করছে, তারা প্রধান স্টেকহোল্ডার হলেও তাদের মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে এবং ‘নোট অব ডিসেন্ট’ সনদে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।

অপরদিকে জামায়াতে ইসলামী সনদকে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে দেখছে এবং মনে করছে, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অপরিহার্য। জামায়াতের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা শিশির মনির বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হলে গণভোট অত্যাবশ্যক। তারা মনে করে, একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট করলে জনগণ সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে ভোট দিতে পারবে না।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কমিশনের সুপারিশকে কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচকভাবে দেখছে। এনসিপি মনে করে, সনদে গণভোটের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’/‘না’ ফরম্যাট গ্রহণ করা উচিত এবং সরকার কবে ও কীভাবে পদক্ষেপ নেবে, তা দেখতে হবে।

সংশয় ও বিতর্ক

দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থান দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো এই অনৈক্য থেকে দ্রুত বেরিয়ে না আসে, তবে সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন দুটোই অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান উল্লেখ করেছেন, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে প্রস্তাবনা এসেছে, তা গ্রহণ করলে উদ্ভূত পরিস্থিতি জাতীয় নির্বাচনের নির্ভরযোগ্যতা ও সময়সূচি প্রভাবিত করতে পারে।

আইন ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া

চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার প্রধান উপদেষ্টার হাতে রয়েছে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, উপদেষ্টা সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের তারিখ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন এবং সরকার সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকবে।
সনদ বাস্তবায়নের নির্ধারিত সময়সীমা ২৭৮ দিনের মধ্যে কার্যকর করা সম্ভব কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এটি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত, দলগুলোতে বিভ্রান্তি ও মতানৈক্য বিরাজ করছে।

সমাধানের প্রয়োজনীয়তা

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মূল উদ্দেশ্যই ছিল একটি সংস্কারভিত্তিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা। সনদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি রাজনৈতিক দলগুলো একমত না হয়, তবে তা জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি ও জনগণের আস্থা উভয়কেই প্রভাবিত করবে।
তারা আরও উল্লেখ করেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কীভাবে এই পরিস্থিতি সমাধান করবেন, তা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের ভবিষ্যত নির্ধারণ করবে।

জুলাই সনদ ও গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতানৈক্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের প্রক্রিয়া যত দ্রুত সম্ভব নির্ধারণ না হলে জাতীয় নির্বাচনও সংশয়ের মধ্যে পড়বে।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেন এবং রাজনৈতিক দলগুলো সেই সিদ্ধান্ত মেনে চলে কি না, সেটাই এখন প্রধান নজরকাড়া বিষয়।

এম আর এম – ২০২৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button