শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের দিন ধার্য বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণা হবে বৃহস্পতিবার। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষে মামলায় বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন মিজানুল ইসলামসহ অন্যান্য প্রসিকিউটররা। ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন রাজসাক্ষী সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মামলার ঘটনা ও মূল অভিযোগ
ডা. শাহিনুর রহমান, আন্তর্জাতিক অপরাধ বিশেষজ্ঞ, জানান, এই মামলা ২০২৫ সালের ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সংঘটিত বিভিন্ন মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্কিত। মামলায় প্রধান অভিযোগ হলো: হত্যা, গণহত্যা ও নির্যাতন। প্রসিকিউশন এ মামলায় পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনে।
রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে স্বীকার করেছেন, আন্দোলন চলাকালীন তাদের বিরুদ্ধে কিছু হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল। এর ফলে তার জবানবন্দি মামলার প্রমাণ হিসেবে গুরুত্ব পায়।
আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক
আসামিপক্ষের রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন যুক্তিতর্কে বলেন, আন্দোলন কোটা সংস্কারের জন্য বৈধ ছিল, তবে সরকার পতনের উদ্দেশ্যে যা করা হয়েছিল তা অবৈধ নয়। তিনি দাবি করেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়নি এবং তাদের খালাস দেওয়া উচিত।
আইনজীবী আরও যুক্তি উপস্থাপন করেছেন যে, রাজসাক্ষীদের জবানবন্দি কিছু ক্ষেত্রে প্রভাবিত বা পক্ষপাতমূলক হতে পারে। বিশেষ করে, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য অপ্রভাবশালী।
আদালতের কার্যক্রম ও প্রক্রিয়া
ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুক্তি উপস্থাপন হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আজ যুক্তি খণ্ডন শেষে চিফ প্রসিকিউটর ও অ্যাটর্নি জেনারেলের সমাপনী বক্তব্যের জন্য রায় ধার্য করা হবে।
মামলায় মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা।
রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
রায়ের দিন ধার্য হওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রায় যেভাবেই আসুক, তা দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে সরাসরি প্রভাব ফেলবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা জানাচ্ছেন, এই মামলার রায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্বাচনী পরিবেশকে প্রভাবিত করতে পারে। এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোও এ রায়ের প্রেক্ষিতে নিজেদের অবস্থান পুনর্বিন্যাস করতে পারে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
আইন ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, আদালত চলাকালীন সময়ের সাক্ষ্য, রাজসাক্ষীর জবানবন্দি এবং দালিলিক প্রমাণ বিচারপতি পর্যবেক্ষণ করবেন। তারা মনে করছেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রায়ের মাধ্যমে দেশের আইনি প্রক্রিয়া দৃঢ় হবে।
ডা. শাহিনুর রহমান আরও বলেন, “রায় ঘোষণার আগে আসামিপক্ষ ও প্রসিকিউশনের যুক্তি উপস্থাপনার সমাপ্তি গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিচার ব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।”
শেখ হাসিনা ও অন্যান্য আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় বৃহস্পতিবার ঘোষণা হবে। দেশের রাজনৈতিক ও আইনি মহলে এই রায়কে কেন্দ্র করে উত্তেজনা এবং আলোচনা তীব্র হবে। বিশ্লেষকদের মতে, রায়ের প্রভাব আগামী জাতীয় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং রাজনৈতিক দৃশ্যপটকে সরাসরি প্রভাবিত করবে।
এম আর এম – ১৮৯৯,Signalbd.com