
পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য সেন্টমার্টিন দ্বীপের রাত্রিযাপন নিয়েও সরকার নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় বুধবার এই প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। দ্বীপের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি পর্যটকদের জন্য নিরাপদ এবং নিয়ন্ত্রিত ভ্রমণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকারের নতুন নির্দেশনার বিস্তারিত
মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নভেম্বর মাসে সেন্টমার্টিনে পর্যটকরা শুধুমাত্র দিনের বেলায় ভ্রমণ করতে পারবেন। রাত্রিযাপন ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি মাসে অনুমোদিত থাকবে। ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
প্রতিদিন দ্বীপে গড়ে দুই হাজারের বেশি পর্যটক উপস্থিত থাকতে পারবেন না। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান দ্বীপে চলাচল করতে পারবে না। এছাড়া, পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে, যেখানে প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষার পদক্ষেপ
সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিশেষ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কয়েকটি নিয়ম কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। দ্বীপে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, উচ্চ শব্দ করা বা বারবিকিউ পার্টি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
কেয়া বনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক এবং অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে বন্ধ থাকবে। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
পর্যটকদের পরিবেশবান্ধব আচরণ নিশ্চিত করতে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান বা শ্যাম্পুর ছোট বোতল বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
অনলাইন টিকিট ও নৌযান নিয়ন্ত্রণ
পর্যটকরা বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে বাধ্য। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
নৌযান চলাচলকে নিয়ন্ত্রিত করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ একত্রে কাজ করছে। কোনো নৌযান মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া দ্বীপে চলাচল করতে পারবে না। এতে দ্বীপের পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।
প্রতি বছর পর্যটক সংখ্যার বৃদ্ধি ও দ্বীপের প্রাকৃতিক ক্ষয় এ ধরনের নতুন নীতি প্রণয়নের কারণ হয়ে থাকে। আগের বছরগুলোতে জানুয়ারি মাসেও রাত্রিযাপন অনুমোদিত থাকলেও এবার ফেব্রুয়ারি মাসে সম্পূর্ণ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ ধরনের বিধিনিষেধ পর্যটক ও স্থানীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক হবে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
নতুন নির্দেশনার ফলে পর্যটকদের ভ্রমণ পরিকল্পনায় পরিবর্তন আসবে। স্থানীয় পর্যটন উদ্যোক্তারা আশা করছেন, নিয়ন্ত্রিত পর্যটন ব্যবস্থা দ্বীপের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দ্বীপের পরিবেশবান্ধব পর্যটনকে আরও উন্নত করবে।
পর্যটকরা কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হবেন, যেমন নভেম্বর মাসে রাত্রিযাপন করতে না পারা। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে দ্বীপের নিরাপদ ও টেকসই পর্যটন নিশ্চিত করবে।
সেন্টমার্টিনে দায়িত্বশীল পর্যটনের উদাহরণ
সরকারের আশা, এই নতুন নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন দ্বীপ হবে দায়িত্বশীল ও পরিবেশবান্ধব পর্যটনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। পর্যটকরা দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষা এবং নিরাপদ ভ্রমণের পাশাপাশি নতুন নিয়ম মেনে চলার দায়িত্বে সচেতন হবেন।
পর্যটকরা এবার থেকে সেন্টমার্টিনে কেবল নির্ধারিত সময় এবং শর্ত মেনে ভ্রমণ করতে পারবেন। সরকারের এই পদক্ষেপ দ্বীপের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে দ্বীপটি দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মডেল হিসেবে পরিচিত হবে।
এম আর এম – ১৮৯৪,Signalbd.com