বাংলাদেশ

রাজধানীতে ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণকারী আ.লীগের ১৩১ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার

Advertisement

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঝটিকা মিছিলে অংশ নেওয়ায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ১৩১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার বিকেলে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয় বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ।

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আকস্মিকভাবে আয়োজিত ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণের অভিযোগে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের মোট ১৩১ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অভিযানে তাদের আটক করা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও জননিরাপত্তা বজায় রাখতে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

ঘটনার বিস্তারিত 

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মঙ্গলবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ, ধানমন্ডি ও মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় এই অভিযান পরিচালিত হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আকস্মিকভাবে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে ঝটিকা মিছিল বের করছিলেন। এতে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছিল এবং সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছিলেন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
পুলিশ জানায়, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন পূর্বেও অননুমোদিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গ্রেপ্তারকৃতদের পরিচয় ও সংখ্যা 

ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ১৩১ জনের মধ্যে ছয়জনের পরিচয় জানা গেছে।
তারা হলেন— কক্সবাজার জেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সহসভাপতি এখলাস মিয়া (২৮), খাগড়াছড়ির মহালছড়ি থানার ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জিয়াউর রহমান (৩৬), মাদারীপুর সদর উপজেলার যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক জুয়েল আহাম্মেদ রনি (৩৯), আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী সাইফুল ইসলাম (৪০), সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. আক্তার হোসেন (৪৭), এবং ঢাকার স্থানীয় আওয়ামী সমর্থক রিয়াজ উদ্দিন (৪৯)।
অন্যদের পরিচয় যাচাইয়ের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর পুনরায় সক্রিয় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ঝটিকা মিছিলের মতো কর্মসূচি গ্রহণের তথ্য আগেই পুলিশের কাছে ছিল বলে সূত্র জানিয়েছে।
গত কয়েক মাস ধরে এমন আকস্মিক মিছিল বা ছোট আকারের সমাবেশের ঘটনায় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে। আগের অভিজ্ঞতা থেকে পুলিশ এবার আরও প্রস্তুত অবস্থায় অভিযান পরিচালনা করে।

পুলিশের বক্তব্য ও আইনি প্রক্রিয়া 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, “রাজধানীতে অনুমতি ছাড়া যে কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ বা মিছিল আইনত নিষিদ্ধ। এর ব্যত্যয় ঘটালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজকের অভিযানে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অনেকে পূর্বেও একই অপরাধে জড়িত ছিলেন।”
তিনি আরও বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। প্রয়োজন হলে তাদের আদালতে রিমান্ড আবেদনও করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পরবর্তী কয়েকদিনও বিশেষ নজরদারি অব্যাহত থাকবে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষণ 

ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, নিষিদ্ধ সংগঠনের নাম ব্যবহার করে এমন আকস্মিক মিছিল মূলত রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার কৌশল হতে পারে। তবে এতে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি রোধে সরকারের উচিত রাজনৈতিক সংলাপ ও আইন প্রয়োগের সমন্বিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

বিশেষজ্ঞ মতামত 

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ঝটিকা মিছিল মূলত আকস্মিক কৌশল, যার লক্ষ্য প্রচার পাওয়া এবং প্রশাসনের মনোযোগ সরানো। তবে বড় শহরে এই ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে গোয়েন্দা নজরদারি ও প্রযুক্তিগত নজরদারি জোরদার করা প্রয়োজন।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের স্বাধীনতা যেমন থাকতে হবে, তেমনি জননিরাপত্তার বিষয়টিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও প্রফেশনাল ও সংবেদনশীলভাবে কাজ করতে হবে।”

রাজধানীতে ১৩১ নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা বেড়েছে। পুলিশের দাবি, এই অভিযান শুধুমাত্র জননিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য, তবে রাজনৈতিক মহলে এটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
আগামী দিনে পরিস্থিতি শান্ত থাকবে নাকি আরও উত্তপ্ত হবে, তা নির্ভর করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও রাজনৈতিক নেতাদের পরবর্তী অবস্থানের ওপর।

এম আর এম – ১৮৭৮,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button