বাংলাদেশ

‘মঞ্চ ৭১’ ষড়যন্ত্রে সাবেক সচিবসহ গ্রেপ্তার ৬, মামলার প্রক্রিয়া চলছে

Advertisement

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ‘মঞ্চ ৭১’ নামক গোপন সংঘটনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, গ্রেপ্তাররা মূলত রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল এবং অনিয়মিত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে নজরদারিতে ছিল।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, “শনিবার রাজধানীতে পরিচালিত অভিযানের অংশ হিসেবে আমরা সাবেক সচিবসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।”

গ্রেপ্তারের সময় ও স্থান

সূত্রের খবর অনুযায়ী, সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খানকে রাজধানীর ইস্কাটনের বোরাক টাওয়ার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি জানিয়েছে, অভিযানের সময় আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা মূল ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

মুহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার, জানিয়েছেন, “শাহবাগ থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলার ভিত্তিতে সাবেক সচিবকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজই তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।”

‘মঞ্চ ৭১’ কি এবং এর প্রেক্ষাপট

‘মঞ্চ ৭১’ মূলত একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনের আড়ালে গঠিত গোপন সংঘটন হিসেবে পরিচিত। পুলিশের সূত্রে জানা যায়, এটি মূলত রাজধানীতে সরকারি নীতি-বিরোধী কার্যক্রম এবং জনমত প্রভাবিত করার জন্য গোপন পরিকল্পনা করছে।

২০১৯ সাল থেকে ‘মঞ্চ ৭১’-এর কার্যক্রম বিভিন্ন সময় নজরে এসেছে। বিশেষ করে তারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় জনসমাবেশ, মিছিল এবং অনিয়মিত কর্মসূচি চালাতে শুরু করে। সম্প্রতি, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তারা এক ধরনের ঝটিকা মিছিলের আয়োজন করেছে, যা নিরাপত্তা বাহিনী নজরদারিতে রেখেছিল।

পুলিশের প্রতিক্রিয়া ও অভিযান

ডিবি সূত্রে জানা যায়, অভিযানের জন্য months ধরে গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। পুলিশের বিশেষ টিম স্থানীয় ও অনলাইন তথ্য বিশ্লেষণ করে গ্রেপ্তার অভিযান পরিচালনা করেছে।

উপ-পুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, “আমরা আগে থেকেই তাদের কার্যক্রম মনিটর করছিলাম। এর মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল এবং রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। তাই আইনগত প্রক্রিয়া শুরু করে দ্রুত অভিযান চালানো হয়েছে।”

এছাড়া পুলিশ বলেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হবে এবং প্রয়োজনে আরও মামলার জন্য প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে।

গ্রেপ্তারের পর প্রক্রিয়া ও আদালতের কার্যক্রম

সূত্র জানায়, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শহীদ খানসহ অন্যান্য গ্রেপ্তারদের দ্রুত আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে। আইন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের মামলা প্রমাণ সাপেক্ষে কার্যকর হলে রাজধানী এবং দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়ক হবে।

আইনজীবী ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, “সন্ত্রাসবিরোধী আইন বা নিরাপত্তা আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য দেশের সাধারণ মানুষকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাখা এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা রোধ করা।”

আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া

স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজধানীতে এমন গ্রেপ্তার অভিযান রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলছেন, “রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম যদি রাষ্ট্রের নীতির সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করে, তা নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুলিশের।”

আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা সাধারণত বলেন, দেশে আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং রাজনৈতিক সংঘাত কমানো জরুরি। তবে তারা পরামর্শ দেন, গ্রেপ্তার কার্যক্রমের সময় মানবাধিকার ও আইনের শর্তাবলী মেনে চলা উচিত।

জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি

রাজধানীর সাধারণ মানুষ এই ঘটনাকে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে দেখছে। কেউ মনে করছেন, সরকারের তৎপরতা দেশের নিরাপত্তার জন্য জরুরি। আবার কেউ মনে করছেন, এটি রাজনৈতিক সংঘর্ষের আড়ালে হতে পারে।

রাজধানীর ব্যবসায়ী মুহাম্মদ রাশেদ বলেন, “নগরী শান্তিপূর্ণ না থাকলে ব্যবসা ও দৈনন্দিন জীবন প্রভাবিত হয়। তাই এ ধরনের অভিযান জরুরি।”

অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাসনিমা আক্তার বলেন, “যে কোন ধরনের রাজনৈতিক সংঘটন দেশের যুবসমাজকে বিভ্রান্ত করতে পারে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।”

বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ‘মঞ্চ ৭১’-এর মতো গোপন সংগঠনগুলো শুধুমাত্র রাজধানী নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা বা জনবিক্ষোভের পরিকল্পনা করতে পারে। তাই তাদের কার্যক্রম মনিটর করা এবং প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

এছাড়া, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আরও প্রমাণ সংগ্রহের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন গোপন সংঘটনের ঘটনা রোধে কাজ করবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলেন, জনসাধারণের নিরাপত্তা ও শহরের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা তাদের মূল দায়িত্ব।

রাজধানীতে ‘মঞ্চ ৭১’ ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাবেক সচিবসহ ছয়জনের গ্রেপ্তার অভিযান একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার প্রচেষ্টার অংশ।

ডিবি ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো বলছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ায় পাঠানো হবে। এছাড়া, ভবিষ্যতে এমন ধরনের সংঘটন রোধে আরও কঠোর নজরদারি এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

MAH – 12698,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button