বাংলাদেশ

বিদেশি সাইটে ভিডিও দেয়া আলোচিত সেই যুগল রিমান্ডে

Advertisement

বিদেশি ওয়েবসাইটে অশ্লীল ভিডিও আপলোডের অভিযোগে গ্রেপ্তার আলোচিত যুগল মোহাম্মদ আজিম ও বৃষ্টিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা এ আদেশ দেন। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় সিআইডি তাদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল।

রিমান্ডের আদেশ ও আদালতের কার্যক্রম

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বিকেলে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা শুনানি শেষে আজিম ও বৃষ্টিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর নির্দেশ দেন। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শামসুদ্দোহা সুমন।

এর আগে পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় সিআইডির সাইবার ইউনিটের উপপরিদর্শক মিজানুর রহমান সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতে হাজির করার সময় অভিযুক্ত দুজনকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে আনা হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে রিমান্ড শুনানি শুরু হয় এবং কিছু সময় পর বিচারক রিমান্ডের আদেশ দেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশে বসে নিয়মিতভাবে পর্নো কনটেন্ট ধারণ ও বিদেশি ওয়েবসাইটে আপলোড করতেন। এসব ভিডিও থেকে তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় করছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে।

বান্দরবানে গোপন ফ্ল্যাটে অভিযান

গত রোববার (১৯ অক্টোবর) রাতে বান্দরবানের রোয়াংছড়ি এলাকার হাজীপাড়ার একটি ছয়তলা ভবনের ফ্ল্যাট থেকে আজিম ও বৃষ্টিকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। সূত্র জানায়, প্রায় ১৫ দিন আগে তারা ওই এলাকায় গিয়ে ফলের ব্যবসার কথা বলে বাসা ভাড়া নেন। তবে স্থানীয়দের সঙ্গে তাদের খুব একটা যোগাযোগ ছিল না।

অভিযানের সময় পুলিশ ফ্ল্যাটে বিভিন্ন ভিডিও ধারণের সরঞ্জাম, লাইট, ক্যামেরা এবং ল্যাপটপ জব্দ করে। তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা, তারা ওই ফ্ল্যাটেই ভিডিও ধারণ ও সম্পাদনা করতেন।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “তারা খুব একটা বাইরে বের হতেন না। রাতে মাঝেমাঝে শব্দ শুনতাম, কিন্তু ধারণা করিনি এমন কাজ করছিল।”

মামলার অভিযোগ: পর্নোগ্রাফি আইনে কঠোর শাস্তির বিধান

বাংলাদেশের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১২ অনুযায়ী, কেউ পর্নোগ্রাফি তৈরি, বিতরণ বা বিক্রি করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার মুখোমুখি হতে পারে।

আইন অনুযায়ী, ডিজিটাল মাধ্যমে অশ্লীল কনটেন্ট প্রচার করা ফৌজদারি অপরাধ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল শুধু নিজেরাই ভিডিও বানাচ্ছিলেন না, বরং অন্যদেরও উৎসাহিত করছিলেন একই কাজ করতে, যার ফলে দেশে একটি অনলাইন পর্ন নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

তদন্তে নতুন তথ্য: বিপুল অর্থ লেনদেন ও বিদেশি সংযোগ

সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্তরা বিদেশি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতি ভিডিও থেকে ডলার আয়ের সুযোগ পেতেন। তাদের অনলাইন ওয়ালেট ও ব্যাংক হিসাব থেকে কিছু লেনদেনের তথ্যও উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, “তারা বাংলাদেশ থেকে ভিডিও আপলোড করলেও আয়ের টাকা পাচ্ছিলেন বিদেশি পেমেন্ট চ্যানেলের মাধ্যমে। এ বিষয়ে ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে অবহিত করা হয়েছে।”

প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভিডিও আপলোড করে তারা কয়েক লাখ টাকার বেশি আয় করেছেন। এছাড়া, তাদের সঙ্গে আরও কয়েকজন যুক্ত আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া: নৈতিক অবক্ষয় ও অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ

ঘটনাটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, ইন্টারনেটের সহজ প্রাপ্যতার কারণে তরুণদের মধ্যে দ্রুত অর্থ উপার্জনের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে, যা সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ঘটাচ্ছে।

সামাজিক বিশ্লেষক ও শিক্ষাবিদদের মতে, এমন ঘটনার পেছনে কেবল ব্যক্তিগত দায়িত্বহীনতা নয়, বরং সাইবার সচেতনতার অভাবও দায়ী। এক সমাজবিজ্ঞানী বলেন, “যুবসমাজের মধ্যে ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার শেখানোর পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা জোরদার করা জরুরি।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্কতা

পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলাকে তারা নজির হিসেবে বিবেচনা করছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ ঠেকাতে সাইবার মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে।

একজন সিআইডি কর্মকর্তা বলেন, “দেশে বসে বিদেশি সাইটে পর্নো ভিডিও আপলোড করা শুধু বেআইনি নয়, বরং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। এই চক্রে যারা যুক্ত, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।”

সাইবার অপরাধ দমনে যৌথ উদ্যোগ দরকার

ডিজিটাল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কনটেন্ট ক্রিয়েশনের নামে অনেকেই এখন বেআইনি কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল আহমেদ বলেন, “যেকোনো ভিডিও কনটেন্ট প্রকাশের আগে সেটির নৈতিকতা, সামাজিক প্রভাব ও আইনি দিক বিবেচনা করা জরুরি। তরুণদের সচেতন না করলে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়তে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইন্টারনেট কনটেন্ট মনিটরিং সিস্টেম আরও শক্তিশালী করতে হবে। পাশাপাশি পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।”

ভবিষ্যত পদক্ষেপ 

রিমান্ডে থাকা আজিম ও বৃষ্টির বিরুদ্ধে সিআইডি বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আরও কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, যদি এই মামলার মাধ্যমে একটি বৃহত্তর নেটওয়ার্কের সন্ধান মেলে, তাহলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায়ও তদন্ত সম্প্রসারিত হতে পারে।

বিশ্লেষকদের মতে, সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের কঠোর প্রয়োগই এখন সবচেয়ে জরুরি। অন্যথায় অনলাইনে অশ্লীল কনটেন্ট তৈরির প্রবণতা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।

এম আর এম – ১৮৭৭,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button