চীনের প্রখ্যাত অভিনেতা, মডেল ও গায়ক ইউ মেংলং আর নেই। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে প্রাণ হারালেন এই প্রতিভাবান শিল্পী। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বেইজিংয়ের একটি ভবন থেকে পড়ে তার মৃত্যু ঘটে। এই খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চীনা বিনোদন জগত এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে আসে।
ইউ মেংলং-এর মৃত্যুর পর তার ব্যবস্থাপনা দল এক বিবৃতিতে জানান, পুলিশ তদন্তে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
“অসহনীয় বেদনা নিয়ে জানাচ্ছি, আমাদের প্রিয় মেংলং ১১ সেপ্টেম্বর ভবন থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। পুলিশ কোনো অপরাধের প্রমাণ পায়নি। আমরা চাই তিনি শান্তিতে থাকুন এবং তার প্রিয়জনরা শক্ত থাকুন।”
মৃত্যুর আগে ঘটনাপ্রবাহ
প্রথমদিকে জানা যায়, ৯ সেপ্টেম্বর ইউ মেংলং কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সঙ্গে এক বন্ধুর বাড়িতে ভোজনের জন্য গিয়েছিলেন। ১১ সেপ্টেম্বর ভোররাতে তিনি তার শোবার ঘরে যান এবং ভেতর থেকে দরজা লাগান। পরদিন সকালে বন্ধুরা তাকে না পেয়ে খুঁজতে গেলে নিচতলা থেকে তার নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ প্রথমে প্রতিবেশীদের কাছ থেকে খবর পেয়েছিল।
ইউ মেংলং-এর বিনোদন জীবন ও ক্যারিয়ার
ইউ মেংলং ২০০৭ সালে ‘মাই শো, মাই স্টাইল’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বিনোদন জগতে পদার্পণ করেন। ২০১১ সালে তিনি ‘দ্য লিটল প্রিন্স’ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর তিনি চীনের জনপ্রিয় ধারাবাহিক ও চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করেন। তার উল্লেখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ‘গো প্রিন্সেস গো’
- ‘লাভ গেম ইন ইস্টার্ন ফ্যান্টাসি’
- ‘ফিউড’
- ‘ইটারনাল লাভ’
অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি একজন প্রতিভাবান গায়কও ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে ইউ মেংলং তার কণ্ঠে একাধিক গান প্রকাশ করেছেন, যা দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ইউ মেংলং-এর প্রভাব ও জনপ্রিয়তা
ইউ মেংলং শুধুমাত্র চীনের বিনোদন জগতে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও একটি শক্তিশালী পরিচিতি গড়ে তুলেছিলেন। তার অভিনয়শৈলী এবং গায়কী উভয় ক্ষেত্রেই তিনি নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন। দর্শকরা তার চরিত্রের গভীরতা এবং আবেগপ্রবণ অভিনয়শৈলীকে বিশেষভাবে স্মরণ করে।
তার কাজগুলোর মধ্যে কিছু ধারাবাহিক সিরিজ আন্তর্জাতিক দর্শকের কাছে পৌঁছে চীনা বিনোদনের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও শক্তিশালী করেছে। বিশেষত ‘গো প্রিন্সেস গো’ সিরিজটি ইউ মেংলং-এর কেরিয়ারে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ইউ মেংলং-এর মৃত্যু খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যেমন হিন্দুস্তান টাইমস, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এবং দ্য গার্ডিয়ান এই খবরকে গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে। অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক ও শ্রদ্ধা
ইউ মেংলং-এর ফ্যানপেজ ও অনলাইন ফোরামে হাজার হাজার ভক্ত তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকে তার স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, “তোমার গান ও অভিনয় আমাদের মনে চিরকাল থাকবে।” চীনের বিনোদন জগতে তার অনুপস্থিতি একটি বড় শূন্যতা তৈরি করেছে।
পরিবারের বিবৃতি
ইউ মেংলং-এর পরিবার সংবাদমাধ্যমে এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানিয়েছে,
“আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের প্রিয় মেংলং এখন আমাদের মধ্যে নেই। আমরা চাই তার আত্মা শান্তিতে থাকুক এবং তার ভক্তরা শক্ত থাকুক।”
চীনের বিনোদন জগতে মৃত্যু যেন একটি সতর্কবার্তা
চীনের বিনোদন জগতে ইতিমধ্যেই বহু যুবক তারকা চাপ ও মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। ইউ মেংলং-এর আকস্মিক মৃত্যু এই সত্যকে পুনর্নির্মাণ করেছে যে, মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং নিরাপদ জীবনযাত্রা বিনোদন জগতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ইউ মেংলং-এর মৃত্যু শুধু চীনা বিনোদন জগতের জন্য নয়, পুরো আন্তর্জাতিক বিনোদন জগতের জন্য একটি বড় ক্ষতি। তার প্রতিভা, আবেগপ্রবণ অভিনয় ও গানসমূহ চিরকাল দর্শক ও শ্রোতাদের হৃদয়ে অম্লান থেকে যাবে। এই ধ্বংসাত্মক খবরটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রিয় তারকারা আমাদের জীবনের অংশ হলেও তারা মানুষ এবং তাদেরও সুরক্ষা ও সহমর্মিতা প্রয়োজন।
ইউ মেংলং-এর অবদান চীনের বিনোদন জগতে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুতে আমরা শোক প্রকাশ করি এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করি।
MAH – 12783, Signalbd.com



