বাংলাদেশ

ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের ৬ দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ

Advertisement

ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত ও ওএসডি (অফিসে নিয়োগ স্থগিত) কর্মকর্তারা চাকরিতে পুনর্বহালসহ তাদের ৬ দফা দাবি আদায়ে শনিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। এতে পুরো মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের মধ্যে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজ এলাকা দিয়ে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই মানববন্ধন শুরু হয়। ইসলামী ব্যাংকের শতাধিক কর্মকর্তা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন। পৌনে ১২টার দিকে অবস্থান ধর্মঘটের মাধ্যমে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এই আন্দোলন মূলত চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের পুনর্বহাল, ওএসডি প্রত্যাহার এবং নিরাপদ, ন্যায্য কর্মপরিবেশের দাবিতে পরিচালিত হচ্ছে।

আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের বক্তব্য

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন,
“আমাদের প্রায় ৪০০ জন কর্মকর্তাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তাকে ওএসডি করে কর্মস্থলে নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আর ধৈর্য ধারণ করা সম্ভব নয়। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের ন্যায্য দাবি সরকারের এবং দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই।”

তিনি আরও বলেন, এই মানববন্ধন মূলত তাদের ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের ৬ দফা দাবি

১. চাকরিতে পুনর্বহাল: চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে যে কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তাদের স্বপদে পুনর্বহাল করতে হবে।
২. অবৈধ ট্রান্সফার বন্ধ: প্রহসনমূলক পরীক্ষা বয়কটের কারণে কর্মকর্তাদের যে শাস্তিমূলক ট্রান্সফার দেওয়া হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
৩. বৈষম্যহীন কর্মপরিবেশ: ব্যাংকে বৈষম্যবিহীন এবং রাজনীতিমুক্ত কর্মপরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
৪. অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট স্থগিত: শর্ত আরোপ করে যে সব ধরনের অ্যাসেসমেন্ট টেস্ট পরিচালনা করা হচ্ছে, তা বন্ধ করতে হবে।
৫. মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের তদন্ত: চট্টগ্রামের কর্মকর্তাদের উপর চালানো মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে এবং পুনরায় কর্মস্থলে ফিরিয়ে নিতে হবে।
৬. হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার: পরীক্ষা বর্জনের জন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি ও সাইবার ক্রাইমে করা হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।

চলমান পরিস্থিতি ও যানবাহন সংকট

চট্টগ্রাম ফৌজদারহাট এলাকা থেকে মহাসড়ক অবরোধের ফলে সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। সকাল থেকে শুরু হওয়া মানববন্ধনে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে পণ্যবাহী ট্রাক, বাস এবং ব্যক্তিগত গাড়ি দীর্ঘ সময় ধরে সড়কে আটকে রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, মহাসড়ক অবরোধের কারণে দৈনন্দিন জীবনে ভোগান্তি হচ্ছে। “সকাল থেকে অফিসে পৌঁছাতে পারিনি, শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না,” বলেন চট্টগ্রামের এক পথচারী।

ব্যাংকের চলমান মানবসম্পদ সমস্যা

ইসলামী ব্যাংকে চাকরিচ্যুত এবং ওএসডি কর্মকর্তাদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংকটি ৪০০ কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত এবং ৪৯৭১ জনকে ওএসডি করেছে, যা ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার ইঙ্গিত দেয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মকর্তা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়, যা কর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ এবং অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া ও সমর্থন

মহাসড়ক অবরোধের খবর সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। নেটিজেনরা এই আন্দোলনকে সমর্থন জানাচ্ছেন, কেউ কেউ ব্যাখ্যা করছেন, “চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি সমর্থন থাকা উচিত।” তবে অনেকে যাত্রী ও সাধারণ মানুষের অসুবিধার জন্য সমালোচনা করেছেন।

স্থানীয় সিএনজি ও বাসচালকরা জানায়, অবরোধের কারণে সকালের এবং দুপুরের সময় যাত্রীদের অভিব্যক্তি বেশ চরমে পৌঁছেছে, অনেককে দূরে নামতে হয়েছে এবং অনেকেই বিকল্প রুট খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন।

দেশের ব্যাংকিং খাতে চাকরিচ্যুত ও ওএসডি সমস্যা

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে চাকরিচ্যুত ও ওএসডি করা কর্মকর্তাদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকে বিবাদমূলক চাকরিচ্যুতি ও ওএসডি সমস্যার খবর প্রায় সময় আসে, যা কর্মীদের নিরাপত্তা ও চাকরির স্থায়িত্বের ওপর প্রশ্ন তোলে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মানবসম্পদ নীতিমালা ও অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা প্রয়োজন, যাতে চাকরিচ্যুতির মতো বিষয় সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা যায়।

সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি

বর্তমানে বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের নজরে আছে। প্রশাসন জানিয়েছেন, তারা আন্দোলনকারীদের সাথে যোগাযোগ করছে এবং শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শেষ করার আহ্বান জানিয়েছে

অপরদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সমস্যার সমাধান না হলে অবরোধ চলতে পারে এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হবে।

বিশেষজ্ঞ মন্তব্য

চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলেন, “ব্যাংকিং খাতে চাকরিচ্যুত ও ওএসডি সমস্যা শুধু কর্মীদের নয়, পুরো অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করে। এর ফলে ব্যাংকের কাজকর্মে ভঙ্গ হয়, সাধারণ গ্রাহক ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়।”

অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ হাসান বলেন, “এই ধরনের সমস্যা দ্রুত সমাধান না করলে দেশের **বৃদ্ধি ও বিনিয়োগ পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা খুব জরুরি।”

আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ

আন্তর্জাতিক ব্যাংকিং পরামর্শকরা মনে করেন, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে চাকরিচ্যুতির মতো পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে গ্রহণযোগ্য নয়। কর্মীদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা না হলে, ব্যাংকগুলোর গুণগত মান এবং গ্রাহক আস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সংবাদ সংক্ষেপ

  • ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত ও ওএসডি কর্মকর্তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
  • মানববন্ধনের মাধ্যমে তারা চাকরিতে পুনর্বহাল, ওএসডি প্রত্যাহার এবং ন্যায্য কর্মপরিবেশের জন্য ৬ দফা দাবি তুলেছেন।
  • অবরোধের কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ, সাধারণ মানুষ ও যাত্রীদের মধ্যে ভোগান্তি।
  • সরকারি ও ব্যাংক প্রশাসনের নজরদারি চলছে, তবে এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো সমাধান হয়নি।

MAH – 13149 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button