বাংলাদেশ

প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ফ্লোটিলার অভিযাত্রী হলেন ড. শহিদুল আলম

Advertisement

বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী ড. শহিদুল আলম প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে যোগ দিলেন ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উদ্দেশে যাত্রা করা গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায়। মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ইতালির ওট্রান্টো বন্দর থেকে ফ্লোটিলার বৃহত্তম জাহাজ ‘কনসায়েন্স’-এ উঠে যাত্রা শুরু করেন তিনি। এ অভিযাত্রায় যোগ দিয়ে তিনি এক নতুন ইতিহাস গড়লেন।

ফ্লোটিলায় যোগদানের ঘোষণা

ড. শহিদুল আলম কয়েক দিন আগেই ঢাকায় সংবাদ সম্মেলনে তার ফ্লোটিলা অভিযাত্রার ঘোষণা দেন। রাজধানীর শুক্রাবাদে দৃকপাঠ ভবনে আয়োজিত সেই অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে পরিচালিত ‘মিডিয়া ফ্লোটিলা’ অভিযানে তিনি অংশ নেবেন। গাজার ওপর ইসরায়েলের আরোপিত অবরোধ ভাঙা এবং চলমান মানবিক বিপর্যয় সম্পর্কে বিশ্বকে সচেতন করাই তার উদ্দেশ্য।

গাজা অভিযাত্রার তাৎপর্য

এই ফ্লোটিলার মূল লক্ষ্য হলো গাজায় ইসরায়েলের আরোপিত দীর্ঘদিনের অবরোধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সচেতনতা তৈরি করা। শুধু ত্রাণ নয়, তথ্য ও সংবাদ ছড়িয়ে দেওয়াও এই অভিযাত্রার অন্যতম কাজ। এজন্য সাংবাদিক, আলোকচিত্রী, মানবাধিকারকর্মী ও চিকিৎসকদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শহিদুল আলম জানিয়েছেন, গাজায় গিয়ে প্রতিদিন তিনি ছবি ও তথ্য পাঠানোর চেষ্টা করবেন, যাতে গাজার ভয়াবহ বাস্তবতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও স্পষ্ট হয়।

শহিদুল আলমের বক্তব্য

ফ্লোটিলায় যোগ দেওয়ার আগে দেওয়া এক বক্তব্যে শহিদুল আলম বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আমি প্রথম যাচ্ছি, তবে আমি বিশ্বাস করি আমি বাংলাদেশের সকল মানুষের ভালোবাসা সঙ্গে নিয়েই যাচ্ছি। এই সংগ্রামে আমরা যদি হেরে যাই, তবে তা মানবজাতিরই পরাজয় হবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “গাজায় এখন গণহত্যা চলছে। ইসরায়েল ও তাদের মিত্ররা এই হামলায় জড়িত, কিন্তু পৃথিবীর অনেক মানুষ এর প্রতিবাদ করছে। আমি সেই প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি জানাতে ফ্লোটিলায় যোগ দিচ্ছি।”

ফ্লোটিলায় অংশগ্রহণকারীরা

এবারের ফ্লোটিলায় রয়েছে প্রায় ৫০টি জাহাজ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় জাহাজ ‘কনসায়েন্স’, যেখানে প্রায় ১০০ জন যাত্রী রয়েছেন। যাত্রীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সাংবাদিক, এক-তৃতীয়াংশ চিকিৎসা-সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ এবং বাকি অংশে রয়েছেন আয়োজক ও কর্মী। এছাড়া আরও ১০টি ছোট নৌযান ফ্লোটিলার সঙ্গে রয়েছে। জানা গেছে, মোট ৪৪টি দেশের প্রতিনিধি এই অভিযাত্রায় অংশ নিচ্ছেন।

ঝুঁকি ও সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা

ইসরায়েল অতীতেও ফ্লোটিলার যাত্রা বাধাগ্রস্ত করেছে। অনেক সময় অভিযাত্রীদের কারাবন্দী বা জাহাজ আটক করার নজিরও রয়েছে। এ কারণে এ যাত্রায় হামলার আশঙ্কা প্রবল। এ প্রসঙ্গে শহিদুল আলম বলেন, “আমরা জানি তারা আমাদের থামাতে চাইবে। আমরা প্রশিক্ষণ নিয়েছি, সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সচেতন আছি। তবুও আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, কারণ এই মানবিক অভিযাত্রা বন্ধ করা যাবে না।”

এর আগে একাধিকবার আন্তর্জাতিক ফ্লোটিলা গাজায় পৌঁছানোর চেষ্টা করেছে। ২০১০ সালে “মাভি মারমারা” নামের জাহাজে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় বেশ কয়েকজন প্রাণ হারান। সেই ঘটনার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে গাজা অবরোধ ভাঙতে ফ্লোটিলা অভিযাত্রা একটি প্রতীকী আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এবারের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে একজন প্রতিনিধি যোগ দেওয়ায় এটি আরও ঐতিহাসিক রূপ পেয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

ফ্লোটিলার যাত্রা নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। মানবাধিকার সংস্থা, শান্তিকামী সংগঠন ও প্রবাসী ফিলিস্তিনিরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে ইসরায়েল বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, তারা কোনোভাবেই গাজা অবরোধ ভাঙতে দেবে না। এ অবস্থায় অভিযাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

বাংলাদেশি প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো একজন নাগরিকের এই অভিযাত্রা দেশের জন্য একটি গর্বের বিষয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। মানবাধিকার ও স্বাধীন মতপ্রকাশের পক্ষে দীর্ঘদিন কাজ করে আসা ড. শহিদুল আলমের এই পদক্ষেপকে অনেকেই সাহসী উদ্যোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের তরুণ সমাজ এবং মানবাধিকার কর্মীরা তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।

বিশ্লেষণ

বিশ্লেষকদের মতে, ফ্লোটিলা অভিযাত্রায় বাংলাদেশের প্রতিনিধি যোগ দেওয়ার বিষয়টি শুধু প্রতীকী নয়, বরং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের অবস্থানকেও দৃঢ়ভাবে তুলে ধরে। গাজার মানবিক সংকটের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক প্রতিবাদে বাংলাদেশ এখন আরও দৃশ্যমান ভূমিকা রাখছে। তবে ফ্লোটিলার নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে এ অভিযাত্রা আবারও সহিংসতার শিকার হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

ড. শহিদুল আলমের ফ্লোটিলায় যোগদান বাংলাদেশকে মানবিক সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক প্রতিবাদমঞ্চে নতুনভাবে পরিচিত করল। এখন সবার দৃষ্টি এই অভিযাত্রার পরিণতির দিকে। ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নির্ধারণ করবে গাজায় এই মানবিক উদ্যোগ কতটা সফল হয়।

এম আর এম – ১৫৯৬,Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button