বাংলাদেশ

বিজিবি হবে সীমান্ত নিরাপত্তা ও আস্থার প্রতীক: মহাপরিচালক

Advertisement

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) দেশের সীমান্ত নিরাপত্তা ও জনগণের আস্থার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

আজ মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী এস আর হাইস্কুল মাঠ প্রাঙ্গণে সুপেয় পানি প্রকল্পের উদ্বোধন শেষে তিনি এই মন্তব্য করেন। নতুন এই প্রকল্পের মাধ্যমে দৈনিক এক হাজারের বেশি পরিবার নিরাপদ ও সুপেয় পানি সংগ্রহ করতে পারবে।

সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য বিজিবির অঙ্গীকার

মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, “বিজিবি শুধুমাত্র সীমান্ত রক্ষা করবে না, বরং মানুষদের আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীক হিসেবেও কাজ করবে। আমরা চাই, সীমান্তবর্তী জনগণ যেন আমাদের ওপর সম্পূর্ণ ভরসা রাখতে পারে।”

তিনি জানান, বিশেষভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের প্রধান সমস্যা হচ্ছে নিরাপদ খাবার পানি। অনেক পরিবার এখনও পুকুর বা বৃষ্টির পানি পান করেন, যা স্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ।

মহাপরিচালক আরও বলেন, “আমরা স্থানীয় জনগণের চাহিদার প্রেক্ষিতে ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সুপেয় পানি প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এটি কেবল সীমান্ত নিরাপত্তার অংশ নয়, এটি বিজিবির মানবিক উদ্যোগের অংশও। আমরা চাই, মানুষ যেন আমাদের মাধ্যমে সুপেয় পানি নিরাপদে পান করতে পারে।”

সুপেয় পানি প্রকল্পের বিশদ

নতুন সুপেয় পানি প্রকল্পটি শ্যামনগরের কৈখালী এলাকার জনসাধারণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পরিবার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ পাবেন।

বিজিবি মহাপরিচালকের মতে, এই প্রকল্প কেবল পানি সরবরাহের জন্য নয়, বরং মানুষের জীবনের মানোন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে রোগব্যাধি কমবে, শিশুর স্বাস্থ্য উন্নত হবে এবং স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে।

সুন্দরবনে বনদস্যু নিয়ন্ত্রণ ও যৌথ অভিযান

সীমান্ত নিরাপত্তার পাশাপাশি বনদস্যু নিয়ন্ত্রণেও বিজিবি কাজ করছে। মহাপরিচালক বলেন, “সুন্দরবন সীমান্তে অভিযান জোরদার করা হয়েছে। কোস্টগার্ডও নিয়মিত অপারেশন পরিচালনা করছে। আমরা বনদস্যু দমন ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।”

তিনি সুনির্দিষ্ট তথ্য দেওয়ার জন্য স্থানীয় জনগণ এবং বিভিন্ন সংস্থাকে সহায়তা করার আহ্বান জানান।

স্বাস্থ্য ও খাদ্য সেবা প্রদান

নতুন প্রকল্পের উদ্বোধনের পরে, শতাধিক স্থানীয় মানুষকে বিজিবি খাদ্য এবং চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। এতে করে এলাকার জনগণের জীবনমানে সরাসরি ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ নওফেল মাহমুদ, সোহরাব হোসেন ভূইয়া, শরীফুল ইসলাম, নীলডুমুর ব্যাটালিয়ন (১৭ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল শাহরিয়ার রাজীব, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

সীমান্ত নিরাপত্তা ও মানবিক উদ্যোগের সমন্বয়

বিজিবি মহাপরিচালকের মতে, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং মানবিক সহায়তা একে অপরের পরিপূরক। সীমান্তের মানুষদের আস্থা অর্জন করতে হলে কেবল নিরাপত্তা নয়, তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করাও জরুরি।

তিনি বলেন, “বিজিবি সীমান্তরক্ষায় শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে, পাশাপাশি জনগণের মৌলিক চাহিদা মেটাতে মানবিক উদ্যোগও চালু রাখবে। সুপেয় পানি প্রকল্পের মতো উদ্যোগ মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”

স্থানীয় জনগণের প্রতিক্রিয়া

স্থানীয়রা এই উদ্যোগকে অত্যন্ত ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন। তারা মনে করেন, বিজিবির মাধ্যমে পানীয় জলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় শিশু এবং পরিবারদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমবে।

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আগে আমাদের শিশুরা অসুস্থ হয়ে যেত। এখন সুপেয় পানি পাওয়ায় স্বাস্থ্যগত সমস্যা অনেক কমে গেছে। আমরা বিজিবির এই উদ্যোগকে সবার জন্য প্রশংসনীয় মনে করি।”

আগামী পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ

মহাপরিচালক জানান, বিজিবি সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি মানবিক প্রকল্প হাতে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা এবং পরিবেশ সুরক্ষা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত।

তিনি বলেন, “সীমান্ত নিরাপত্তা একদিকে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করাও সমানভাবে জরুরি। আমরা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে একযোগে কাজ করে আরও বেশি মানবিক উদ্যোগ চালু করতে চাই।”

বিজিবি মহাপরিচালকের মন্তব্য ও উদ্যোগ প্রমাণ করে, সীমান্ত নিরাপত্তা শুধুমাত্র সেনা বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে সম্ভব নয়। জনগণের আস্থা অর্জন, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

বিজিবির এই উদ্যোগ সীমান্তবর্তী জনগণের জীবনমান উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। সুপেয় পানি প্রকল্পের মতো পদক্ষেপ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের উন্নয়নেও সহায়ক হবে।

বিজিবির এই মানবিক ও নিরাপত্তা উদ্যোগ দেশের অন্যান্য সীমান্ত এলাকায় অনুসরণযোগ্য একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে।

MAH – 13083 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button