প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপল অর্ডার (আরপিও) এ যেহেতু ‘প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন’ বা পিআর পদ্ধতি নেই, তাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রচলিত পদ্ধতিতেই অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, আইন পরিবর্তন ছাড়া কমিশন নিজ উদ্যোগে কোনো নতুন ভোটপদ্ধতি চালু করতে পারে না।
নির্বাচন হবে প্রচলিত পদ্ধতিতে
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিইসি বলেন, “আমাদের সামনে যে আইন আছে, সেটিই আমাদের অনুসরণ করতে হবে। আরপিওতে পিআর পদ্ধতি নেই, তাই বিদ্যমান পদ্ধতিতেই ভোট হবে।” তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে রমজানের আগেই ভোট অনুষ্ঠানের জন্য সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পিআর পদ্ধতি কী এবং কেন আলোচনায়
প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন বা পিআর পদ্ধতিতে দলগুলো তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে সংসদে আসন পেয়ে থাকে। অর্থাৎ, যে দল যত ভোট পাবে, সেই অনুপাতে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মহলে এ নিয়ে আলোচনা হলেও আইনগত কাঠামোতে এই পদ্ধতির কোনো উল্লেখ নেই। এজন্য কমিশন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
রাজনৈতিক দলের প্রতীক বিতর্ক
নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি ১১৫টি প্রতীকের তালিকা প্রকাশ করেছে। এ তালিকায় ‘নৌকা’ প্রতীক স্থগিত রেখে দাঁড়িপাল্লা প্রতীক পুনর্বহাল করা হয়েছে। তবে তালিকায় শাপলা প্রতীক অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যা নিয়ে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, “কোন দলকে কোন প্রতীক দেওয়া হবে, তা কমিশনের এখতিয়ার। এ নিয়ে আলাদা করে ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন প্রসঙ্গে
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দিতে কমিশন আগ্রহী, তবে কোনো অস্বচ্ছতা রাখতে চাই না। যেসব দলের বিষয়ে আপত্তি এসেছে, সেগুলো পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে।” তিনি আরও জানান, শুধু গোয়েন্দা সংস্থার ওপর নির্ভর করে নয়, কমিশন নিজস্ব প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করছে।
প্রবাসী ভোটারদের অংশগ্রহণের পরিকল্পনা
প্রধান নির্বাচন কমিশনার আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবার প্রবাসী বাংলাদেশিরাও ভোট দিতে পারবেন। এজন্য প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, এটি বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে একটি বড় অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে।
নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক সমঝোতার আশা
সিইসি বলেন,
“সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে সমঝোতায় পৌঁছাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আমরা নিরপেক্ষ থেকে সুষ্ঠু ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দল নিয়ম ভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে মাঠে নামেনি।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সিইসি-র বক্তব্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। তারা মনে করেন, পিআর পদ্ধতি চালু হলে ছোট দলগুলো সংসদে প্রতিনিধিত্বের সুযোগ পেত। তবে আইন পরিবর্তন ছাড়া তা সম্ভব নয়। ফলে এই সিদ্ধান্ত বর্তমান ব্যবস্থাকেই বহাল রাখছে।
সর্বোপরি, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রচলিত পদ্ধতিতেই অনুষ্ঠিত হবে। নতুন কোনো পদ্ধতি চালু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন সবার দৃষ্টি আগামী দিনের দিকে, যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে সমঝোতায় আসে এবং ভোটের পরিবেশ কতটা সুষ্ঠু থাকে, তা-ই নির্ধারণ করবে নির্বাচনের সফলতা।
এম আর এম – ১৫১৪,Signalbd.com



