বাংলাদেশ

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় লাইনম্যানকে লক্ষ্য করে গুলি

Advertisement

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জেরে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুই কর্মীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটেছে। এসময় লাইনম্যান সোহাগ মিয়া গুরুতর আহত হন। চার মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করায় গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরই ক্ষুব্ধ হয়ে গুলি চালায় অভিযুক্তের ছেলে আব্দুর রহিম।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভেড়ামারা থানায় একটি মামলা হয়েছে এবং আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

কীভাবে ঘটলো ঘটনা

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাধবপুর গ্রামের তাজমল হোসেন দীর্ঘ চার মাস ধরে (জুন, জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেননি। একাধিকবার বিল পরিশোধের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে তাকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু তিনি বিল পরিশোধে অনাগ্রহ দেখান।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী বিল বকেয়া থাকলে নির্দিষ্ট সময় পরে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়। সেই নিয়ম মেনেই সোমবার দুপুরে লাইনম্যান সোহাগ মিয়া ও রাহুল মিলে তাজমল হোসেনের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাজমলের ছেলে আব্দুর রহিম ঘর থেকে বের হয়ে এসে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে। তবে গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর তিনি লাইনম্যান সোহাগ মিয়াকে ধরে বেধড়ক মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা সোহাগকে উদ্ধার করে ভেড়ামারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।

পুলিশের বক্তব্য

ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রব তালুকদার বলেন,

“এ ঘটনায় একজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া

কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ভেড়ামারা জোনাল অফিসের ডিজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন,

“বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় নিয়ম অনুযায়ী লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল। কিন্তু গ্রাহকের ছেলে ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যুৎ কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং মারধর করে। আমরা চাই, অপরাধীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”

এফ এম সাইদুর রহমান, সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) জানান,

“লাইনম্যানদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমরা চাই, বিদ্যুৎ কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিক।”

আহত লাইনম্যানের অবস্থা

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গুরুতর আহত সোহাগ মিয়ার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে এবং পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। যদিও গুলি শরীরে লাগেনি, তবে বেধড়ক মারধরের কারণে তিনি বেশ কিছুদিন কাজে যোগ দিতে পারবেন না।

গ্রামীণ বিদ্যুৎ বিল বকেয়া ও আইনি ব্যবস্থা

বাংলাদেশে অনেক গ্রাহক নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন না। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তিন মাসের বেশি বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অধিকার রয়েছে বিদ্যুৎ সমিতির। তবুও অনেক গ্রাহক এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন, কখনো কখনো বিদ্যুৎ কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।

আইন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ কর্মীর ওপর হামলা করা গুরুতর অপরাধ। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হিসেবে জেল, জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। বিদ্যুৎ অফিস বলছে, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন,

“বিদ্যুৎ বিল নিয়মিত পরিশোধ করা প্রতিটি গ্রাহকের দায়িত্ব। কর্মীদের মারধর বা গুলি চালানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা চাই অপরাধীর দ্রুত বিচার হোক।”

বিদ্যুৎ কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

বিদ্যুৎ খাতে কর্মরত অনেক কর্মী জানিয়েছেন, তারা প্রায়শই গ্রাহকের অসন্তোষের মুখে পড়েন। অনেক সময় হুমকি দেওয়া হয়, কখনো শারীরিক আক্রমণের শিকার হতে হয়। বিদ্যুৎ খাতের শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, মাঠপর্যায়ের কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জেরে লাইনম্যানকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর ঘটনাটি দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ ঘটনায় আবারও প্রশ্ন উঠেছে—বিদ্যুৎ কর্মীদের নিরাপত্তা কোথায়? গ্রাহক সচেতনতা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপই এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধ করতে পারে।

MAH – 12980 I Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button