
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ভারত থেকে কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে গ্রহণ করা হবে না। তবে বাংলাদেশী নাগরিক যারা অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করছেন, তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিরিয়ে নেওয়া হবে। পাশাপাশি ভারত যে ‘পুশ ইন’ নীতি গ্রহণ করছে, তা বাংলাদেশের পক্ষে মেনে নেওয়া যায় না এবং এটি নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
২৬ জুলাই শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা সংস্থার কর্মক্ষেত্র পরিদর্শনকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ তথ্য জানান। তিনি পুলিশ লাইন, সিদ্ধিরগঞ্জের র্যাব-১১ কার্যালয় ও জালকুড়ির বিজিবি-৬২ ব্যাটালিয়ন অফিস পরিদর্শন করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না। তারা যেভাবে ভারতে চাপানো হচ্ছে বা ‘পুশ ইন’ করা হচ্ছে, তা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।”
অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে: যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের নাগরিক যারা অবৈধভাবে ভারতে রয়েছেন, তাদের আইনানুগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা হবে। এটি আমরা সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করব যেন কেউ অনিয়ম বা অন্যায়ের শিকার না হয়।”
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মামলায় সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস
লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থানের মামলায় অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে বলে আমরা দেখছি। এজন্য তদন্ত প্রক্রিয়া কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি হয়রানির শিকার না হন।”
তিনি আরো জানান, অভ্যুত্থানের মামলাগুলো সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে যথাযথ সময়ে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে।
নির্বাচনের নিরাপত্তা: অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপরতা
নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও নিরাপদ করার জন্য দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী বিশেষ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আগামী নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সারাদেশে অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। অভ্যুত্থানে ব্যবহৃত অস্ত্রগুলোসহ সকল অবৈধ অস্ত্র দ্রুত উদ্ধার করে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।”
পুশ ইন নীতি ও তার প্রভাব
ভারত সরকার দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তের রোহিঙ্গাদের ‘পুশ ইন’ নীতি অবলম্বন করছে। এর অর্থ হচ্ছে, সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ফেরত ঠেলে দেওয়া। এই কাজ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে এসব রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে আটক বা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ সরকার অবশ্য এ ধরনের অনৈক্যবোধক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকটের পটভূমি ও বর্তমান পরিস্থিতি
রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের এক সংখ্যালঘু মুসলিম জাতি। দীর্ঘদিন ধরে তাদের উপর নির্যাতন ও অত্যাচারের ফলে ২০১৭ সালে একটি বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। বাংলাদেশ সরকার তাদের মানবিক দিক বিবেচনা করে আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে বা অন্যত্র গমন নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের সীমান্ত দিয়ে ফিরে আসতে চাপ দিচ্ছে, যা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় নিরাপত্তা ও মানবাধিকার চ্যালেঞ্জ।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, দেশের নিরাপত্তা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা একযোগে কাজ করছে। সীমান্ত নিরাপত্তা বাড়ানো, অবৈধ অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পাশাপাশি সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। এছাড়া চলমান অভ্যুত্থানের মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তদন্ত সংস্থাগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জনগণের নিরাপত্তা ও শান্তির জন্য গুরুত্ব আরোপ
দেশের সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি বজায় রাখতে সরকার অত্যন্ত সচেতন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তৎপরতা অব্যাহত থাকবে যাতে কেউ অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত হতে না পারে। এছাড়া সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়।
সংক্ষেপে:
- ভারত থেকে কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে নেওয়া হবে না।
- অবৈধভাবে ভারতে থাকা বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনার জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
- জুলাই গণঅভ্যুত্থান মামলায় নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি রোধে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
- নির্বাচন নিরাপদ করার জন্য অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চলছে।
- ভারত সরকারের ‘পুশ ইন’ নীতি নিন্দনীয় এবং এটি বাংলাদেশের জন্য নিরাপত্তার বড় হুমকি।