বাংলাদেশ

নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধের সাজা বাড়ছে

নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধের শাস্তি আরও কঠোর করা হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে নির্বাচন কর্মকর্তা (বিশেষ বিধান) আইন ১৯৯১ সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। সংশোধিত আইন কার্যকর হলে দায়িত্ব পালনে অবহেলা, দায়িত্ব অমান্য ও আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে জবাবদিহি আরও শক্তিশালী হবে।

সংশোধিত আইন ও প্রধান দিকনির্দেশনা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত সভায় নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন দেয়া হয়। সংশোধিত আইন অনুযায়ী, নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলার জন্য জরিমানার পরিমাণ এবং কারাদণ্ডের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

আগের আইন অনুযায়ী কোনো কর্মকর্তা দায়িত্ব পালনে অস্বীকৃতি জানালে ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান ছিল। নতুন আইন অনুযায়ী জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অপরাধের ক্ষেত্রে পূর্বে ৬ মাস কারাদণ্ড বা ২ হাজার টাকা জরিমানা থাকলেও এখন তা কমপক্ষে ১ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সংশোধিত আইনে অসদাচরণের সংজ্ঞা আরও বিস্তৃত হয়েছে। এতে কমিশন বা রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশ অমান্য করা, আইন ইচ্ছাকৃতভাবে লঙ্ঘন করা, এবং দায়িত্বে অবহেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

নির্বাচনী দায়িত্বে জবাবদিহি ও তদারকি

নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে এই আইন সংশোধন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে নিয়মিত মনিটরিং ও পর্যালোচনা প্রক্রিয়া চালানো হবে। সংশোধিত আইন কার্যকর হলে দায়িত্বে অবহেলার কারণে নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

সভায় ১২১টি সংস্কার প্রস্তাবের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে ২৪টি সংস্কার ইতিমধ্যেই বাস্তবায়িত, ১৪টি আংশিক বাস্তবায়িত এবং বাকি সংস্কারের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। আগামী মাসের মধ্যে সব সংস্কারের সংকলন বুকলেট আকারে প্রকাশ করা হবে।

সংশোধিত আইনের প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই আইন সংশোধনের ফলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে সতর্কতা বৃদ্ধি পাবে। দায়িত্বে অবহেলা ও আইন লঙ্ঘনের ঘটনা কমতে পারে, যা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।

রাজনীতিবিদ এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, দায়িত্বে জবাবদিহি ও শাস্তি কঠোর করা নির্বাচন ব্যবস্থায় আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক। এটি প্রার্থীদের মধ্যে সৎ ও স্বচ্ছ আচরণের উদাহরণ স্থাপন করবে।

আন্তর্জাতিক ও দেশীয় তুলনা

অনেক দেশেই নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে। যেমন ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলা ধরা পড়লে দীর্ঘমেয়াদি কারাদণ্ড ও জরিমানা রয়েছে। বাংলাদেশের এই সংশোধনী আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নেওয়ার একটি পদক্ষেপ।

বিশ্লেষণ ও বিশেষজ্ঞ মতামত

নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংশোধিত আইন কার্যকর হলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের মধ্যে সতর্কতা ও দায়িত্ববোধ বাড়বে। একজন বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করেছেন, “নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে শৃঙ্খলা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দায়িত্বে অবহেলার কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রতারণা বা জটিলতা কমবে।”

নির্বাচনী দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধের শাস্তি বাড়ানোর এই পদক্ষেপ নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সংশোধিত আইন কার্যকর হওয়ার পর নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও সতর্কতা বৃদ্ধি পাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা নির্ভর করবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও তদারকির উপর।

এম আর এম – ১৪১৩,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button