জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রমকে ঢাবি শিক্ষার্থীদের লাল কার্ড

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঢাকায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ের কার্যক্রমের তীব্র বিরোধিতা জানিয়ে আজ রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে তারা প্রতীকীভাবে লাল কার্ড প্রদর্শন করে দাবি জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
ঘটনার বিস্তারিত
বুধবার বিকেল ৪টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের সামনে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী” ব্যানারে একদল শিক্ষার্থী এই সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের নামে দেশে বিদেশি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চলছে। এই ধরনের কার্যক্রম দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে তারা মন্তব্য করেন।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা হাতে লাল কার্ড উঁচিয়ে বিদেশি এজেন্ডার বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান এবং সরকারের কাছে অবিলম্বে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ করার দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও বক্তব্য
সমাবেশে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “যেসব দেশে মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে, সেসব দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়েও নাজুক। অথচ সেসব দেশের জন্য কার্যকর কোনো পদক্ষেপ জাতিসংঘ নেয় না। বাংলাদেশে কেন এই অফিসের কার্যক্রম চালু করা হলো তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।”
অন্য এক শিক্ষার্থী রাব্বি হাসান বলেন, “ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন চললেও সেখানে এমন অফিস স্থাপন হয়নি। তাহলে কেন বাংলাদেশে? আমরা মনে করি এটা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা।”
শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি সরকারের পক্ষ থেকে এই কার্যক্রম বন্ধ না করা হয়, তবে আরও কঠোর আন্দোলন হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।”
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের একটি কার্যালয় ঢাকায় কার্যক্রম শুরু করেছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ এবং সুরক্ষার কাজ হবে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে। তবে এর বিরুদ্ধে দেশের কিছু মহল শুরু থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের নামে আন্তর্জাতিক সংস্থার এই উপস্থিতি দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে — এই আশঙ্কা থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সূত্রপাত।
প্রতিক্রিয়া ও জনমত
শিক্ষার্থীদের এই লাল কার্ড সমাবেশ ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তাদের সাহসী অবস্থানকে স্বাগত জানাচ্ছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কার্যালয়ের উপস্থিতি দেশের জন্য ইতিবাচক হতে পারে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের প্রতিবাদ দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির জটিলতা আরও বাড়াতে পারে। সরকারকে সঠিক কূটনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে এই সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. মাহমুদ হাসান বলেন, “জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যক্রমের ইতিবাচক দিক যেমন আছে, তেমনি নেতিবাচক দিকও আছে। শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ একেবারেই অমূলক নয়। এ ধরনের অফিস খোলার আগে জনমতের গুরুত্ব দেওয়া উচিত ছিল।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের স্বাধীনতা ও অভ্যন্তরীণ নীতিতে হস্তক্ষেপের আশঙ্কা দূর করতে সরকারকে পরিষ্কার নীতিমালা তৈরি করতে হবে এবং জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে।”
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা দেন, তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা আগামী দিনে আরও বৃহত্তর কর্মসূচি হাতে নেবেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থে নয়; বরং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে ওঠা একটি আন্দোলন।
বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস কার্যক্রম নিয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি। এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে এই ইস্যু সমাধান করে এবং শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সাড়া দেয়।
সারসংক্ষেপ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই লাল কার্ড প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক মহলে নজর কেড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, আগামী দিনে সরকারের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে, নাকি শান্ত হবে।
এম আর এম – ০৬০২ , Signalbd.com