বাংলাদেশ

জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবারকে আইনি সহায়তা দেয়া হবে: স্নিগ্ধ

জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহতদের পরিবার যেন ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সেই লক্ষ্যেই এবার আইনি সহায়তা প্রদানের ঘোষণা দিলেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাবেক সিইও মীর স্নিগ্ধ। সোমবার ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ প্রতিশ্রুতি দেন। এ সময় একজন আহত জুলাইযোদ্ধাকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করে ফাউন্ডেশন।

আইনি সহায়তার ঘোষণা

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মীর স্নিগ্ধ বলেন, “শহীদ ও আহত পরিবারের জন্য আইনি সহায়তা প্রদান কার্যক্রম আজ থেকে শুরু হলো। যত প্রতিবন্ধকতা থাকুক না কেন, আমরা তাদের পাশে থাকব।” তিনি জানান, জমি-সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ, ভাতা বা পুনর্বাসন প্রকল্পে জটিলতা দেখা দিলে আইনজীবীদের সহায়তায় পরিবারগুলোকে সাহায্য করবে ফাউন্ডেশন।

তার মতে, পরিবারগুলো শুধু আর্থিক সহায়তা নয়, আইনি প্রক্রিয়ায়ও সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য। “আমাদের প্রতিজ্ঞা হলো, তাদের অধিকার ও ন্যায্য দাবি রক্ষায় ফাউন্ডেশন সবসময় লড়াই চালিয়ে যাবে।”

পুনর্বাসন কার্যক্রমের সূচনা

অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো একজন আহত জুলাইযোদ্ধাকে দোকান করে দিয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু হয়। রাজধানীর আদাবরের সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় শামীম হাওলাদার নামে ওই যোদ্ধাকে একটি দোকান চালুর জন্য সহায়তা দেওয়া হয়। পাশাপাশি দোকানটি সচল রাখতে একটি ফ্রিজও উপহার দেওয়া হয়।

মীর স্নিগ্ধ বলেন, “আজকের এই উদ্যোগই প্রমাণ করে যে, আমরা শুধু ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকব না, বাস্তব পদক্ষেপও নেব।”

২০০০ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থানে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারান এবং অনেকে গুরুতর আহত হন। সে সময়ের ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে পরিবারগুলো এখনও নানা সমস্যায় ভুগছে। অনেক পরিবার হারিয়েছে উপার্জনক্ষম সদস্যকে, কেউ আবার শারীরিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছেন।

এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে গঠিত হয় জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন। গত দুই দশক ধরে ফাউন্ডেশনটি বিভিন্ন সময়ে শহীদ পরিবারের জন্য সহায়তা প্রদান করে আসছে। এবার সেই কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ হলো আইনি সহায়তা।

ফাউন্ডেশনের আর্থিক কাঠামো

মীর স্নিগ্ধ জানান, ফাউন্ডেশনের আমানত একান্তই শহীদ ও আহতদের জন্য ব্যয় করা হয়। অফিস খরচ বা প্রশাসনিক ব্যয় অন্য খাত থেকে মেটানো হয়। তার বক্তব্য অনুযায়ী, এই স্বচ্ছতা বজায় রাখার কারণেই পরিবারগুলোর আস্থা অটুট রয়েছে।

অন্যদিকে, নতুন সিইও কামাল আকবর জানান, বর্তমানে প্রায় ১৪ হাজার আহত ব্যক্তি এবং শহীদ পরিবারের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা হাতে আছে। এ সপ্তাহে অন্তত ৬টি পরিবারকে বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করা হবে। এরই মধ্যে ৪ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

আইনি সহায়তা প্রদানের ঘোষণায় শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এতদিন তারা বিভিন্ন জায়গায় ছুটোছুটি করলেও যথাযথ আইনি সহযোগিতা পাননি। ফাউন্ডেশনের এ উদ্যোগ তাদের জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার পথ সহজ করবে।

একজন শহীদ পরিবারের প্রতিনিধি বলেন, “আমরা শুধু অর্থ সহায়তা চাই না, আমাদের অধিকার রক্ষায় পাশে দাঁড়াক, সেটাই সবচেয়ে জরুরি। ফাউন্ডেশনের এই প্রতিশ্রুতি আমাদের জন্য আশার আলো।”

বিশেষজ্ঞ মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের উদ্যোগ দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে। তাদের মতে, আহত ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা যদি সংগঠিতভাবে আইনি সহায়তা পান, তবে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সহজ হবে।

একজন আইনবিদ বলেন, “আইনি প্রক্রিয়া সাধারণ মানুষের জন্য জটিল। ফাউন্ডেশন যেভাবে আইনজীবী ও সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনা নিয়েছে, তা কার্যকর হলে পরিবারগুলোর অধিকার রক্ষা সহজ হবে।”

জুলাই অভ্যুত্থানে হতাহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি নতুনভাবে দৃশ্যমান হলো ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে। শুধু আর্থিক নয়, আইনি সহায়তাও যে তাদের অধিকার আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ, তা এবার স্পষ্ট করলেন মীর স্নিগ্ধ। এখন দেখার বিষয়, ঘোষণার পর এই কার্যক্রম কত দ্রুত বাস্তবে রূপ নেয় এবং পরিবারগুলো কতটা উপকৃত হয়।

এম আর এম – ১৩৪২,Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button