বাংলাদেশ

পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারে সক্রিয় সরকার: অ্যাটর্নি জেনারেল

বাংলাদেশ সরকার বিগত বছরের সময় দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থের অনুসন্ধান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করছে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, “আমরা দেশের লুটপাট ও পাচারকৃত অর্থের কোনো ঘটনাকেই অবহেলা করছি না। প্রয়োজনীয় তদন্ত ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে যাতে জনগণের অধিকার রক্ষা করা যায়।”

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) মিরপুর সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ন্যাশনাল ল ফেস্ট ২০২৫ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এই উৎসব আইন শিক্ষার্থীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা ও জ্ঞান প্রদর্শন করতে পারে।

পাচারকৃত অর্থ ও আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও জানান, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত কয়েক বছর ধরে দেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় ১৯ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ দেশের তিনটি বার্ষিক বাজেটের সমান। তিনি বলেন, “এটি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, বরং দেশের আইন ও নৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করে। আমরা এটিকে যথাযথ আইনি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসার জন্য কাজ করছি।”

সরকার ইতিমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি, এবং অর্থপাচার রোধ সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে এই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে। তারা পাচারকৃত অর্থের উৎস, প্রাপক এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক লেনদেনের বিশদ খতিয়ে দেখছে।

বার কাউন্সিল পরীক্ষা: স্বচ্ছতা নিশ্চিত

অ্যাটর্নি জেনারেল তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, “বার কাউন্সিল পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছি।”

বর্তমান সরকার আইন শিক্ষা ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে:

  • ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বার কাউন্সিল পরীক্ষা পরিচালনা
  • পরীক্ষার সকল ধাপ অনলাইনে নজরদারি করা
  • শিক্ষার্থী ও পরীক্ষক উভয়ের জন্য নিরাপদ ও নিরপেক্ষ পরিবেশ নিশ্চিত করা

এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা প্রদান ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ন্যাশনাল ল ফেস্ট ২০২৫: শিক্ষার্থীদের জন্য উদ্দীপনা

বিইউপি কর্তৃপক্ষ জানান, ফেস্টের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমের বাইরের দক্ষতা বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে তারা আইনচর্চা, নীতিনির্ধারণ, পাবলিক স্পিকিং এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্ক উন্নয়নে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে।

ফেস্টে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৪০০ শিক্ষার্থী এবং ৫০ জন বিশিষ্ট বিচারক ছিলেন। বিচারকরা শিক্ষার্থীদের বিতর্ক, মক ট্রায়াল এবং আইনভিত্তিক কার্যক্রমের মূল্যায়ন করেন।

উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ ছিল:

  • মক কোর্ট সেশন: শিক্ষার্থীরা কোর্টের প্র্যাকটিক্যাল অভিজ্ঞতা লাভ করেছে
  • ডিবেট ও পাবলিক স্পিকিং প্রতিযোগিতা: শিক্ষার্থীরা তর্ক ও ভাষণ দক্ষতা প্রদর্শন করেছে
  • আইন সম্পর্কিত সেমিনার ও ওয়ার্কশপ: শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে পেরেছে

বিইউপি শিক্ষার্থী সমিতি জানিয়েছে, এই ধরনের অনুষ্ঠান শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সহায়ক।

সরকারের পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, “অর্থ পাচার রোধে আমাদের কার্যক্রম এক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়। আমরা দীর্ঘমেয়াদী নীতি প্রণয়ন করছি যা দেশের আর্থিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।”

সরকার ইতিমধ্যে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিয়েছে:

  1. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: বিদেশে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে সমঝোতা চুক্তি।
  2. ফাইন্যান্সিয়াল ট্রানজেকশন মনিটরিং: ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি।
  3. আইন প্রয়োগ ও দণ্ডনীতি শক্তিশালীকরণ: দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত এবং কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পদক্ষেপগুলি দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে এবং আন্তর্জাতিক মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে তুলে ধরবে।

শিক্ষার্থীদের জন্য বার্তা

অ্যাটর্নি জেনারেল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা দেশের ভবিষ্যৎ। আপনারা ন্যায়বিচার এবং আইনের মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। পাঠ্যক্রমের বাইরে অংশগ্রহণ, বিতর্ক, ও মক কোর্ট অভিজ্ঞতা আপনাদের পেশাগত ও নৈতিক দিক শক্তিশালী করবে।”

এই ধরনের উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশে সহায়ক, যা ভবিষ্যতে দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার জন্য নতুন নেতৃত্ব প্রস্তুত করবে।

দেশের অর্থ পাচার রোধ, শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধি এবং ন্যায়বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাই সরকারের মূল লক্ষ্য। অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্যোগ এবং শিক্ষাবিষয়ক উৎসবগুলি এই লক্ষ্য পূরণের জন্য একে অপরের পরিপূরক।

বিইউপি ন্যাশনাল ল ফেস্ট ২০২৫ এই বার্তা স্পষ্ট করেছে যে, নতুন প্রজন্মের আইন শিক্ষার্থীরা শুধু পাঠ্যক্রমেই সীমাবদ্ধ নয়, তারা সমাজ ও দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে প্রস্তুত।

MAH – 12809  Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button