জাকসু নির্বাচন: ২৫ পদের ২০টিতেই জিতল শিবির-সমর্থিত প্যানেল

৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল চমকপ্রদ বিজয় অর্জন করেছে। জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে ২০টিতে জয় পেয়েছে শিবির সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা।
নির্বাচনের ফলাফলের সারসংক্ষেপ
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর দেখা গেছে, জিএস পদে মো. মাজহারুল ইসলাম এবং দুইটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ ও নারী) পদে ফেরদৌস আল হাসান ও আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা জয়ী হয়েছেন। এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণা, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ, সাহিত্য ও প্রকাশনা, সহসাংস্কৃতিক, নাট্য ও ক্রীড়া সম্পাদকসহ আরও ১৩টি পদে বিজয়ী হয়েছেন শিবির সমর্থিত প্রার্থীরা।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে আব্দুর রশিদ (জিতু) জয়ী হয়েছেন। এছাড়া বাকি কিছু পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) সমর্থিত প্রার্থীরাও জয় লাভ করেছেন।
ভোটগ্রহণ ও গণনার প্রক্রিয়া
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ অনুষ্ঠিত ভোটগ্রহণের পর শুক্রবার ও শনিবার দিনের পর দিন গণনার মাধ্যমে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। জাকসু নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৭০ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন।
শীর্ষ তিন পদে বিজয়ী প্রার্থীর বিস্তারিত
জিএস পদে মো. মাজহারুল ইসলাম ৩,৯৩০ ভোটে জয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরামের আবু তৌহিদ মো. সিয়াম, যিনি পেয়েছেন ১,২৩৮ ভোট। এজিএস (পুরুষ) পদে ফেরদৌস আল হাসান ২,৩৫৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। এজিএস (নারী) পদে আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ৩,৪০২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্যানেল ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’-এর আব্দুর রশিদ (জিতু) জয়ী হয়েছেন ৩,৩৩৪ ভোটে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের আরিফ উল্লাহ, যিনি পেয়েছেন ২,৩৯২ ভোট।
অন্যান্য পদে বিজয়ী প্রার্থীদের তালিকা
শিবির সমর্থিত প্যানেলের বাইরে কিছু পদে বাগছাস ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও জয় লাভ করেছেন। যেমন, সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন (পুরুষ) পদে বাগছাস সমর্থিত প্রার্থী আহসান লাবিব জয়ী হয়েছেন। ক্রীড়া সম্পাদক পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. মাহামুদুল হাসান ৫,৭৭৮ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
এই বিজয় শিবিরের সংগঠন ও সমর্থনীর মধ্যে আনন্দের সঞ্চার করেছে। নির্বাচিত প্রার্থীরা জানিয়েছেন, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও অধিকার আদায়ে কাজ করবেন।
নির্বাচনের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
শিবির সমর্থিত প্যানেলের বিজয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে জাকসুর কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও স্বার্থ রক্ষা আরও শক্তিশালী হবে।
স্বতন্ত্র ও বাগছাস সমর্থিত প্রার্থীরা নির্বাচনের ফলাফলকে সম্মান জানিয়ে জানিয়েছেন, তারা প্রার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবেন। এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে অংশগ্রহণমূলক পরিবেশকে আরও প্রজ্বলিত করবে।
নির্বাচন কমিশনের মন্তব্য
জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, “নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা স্বচ্ছভাবে অংশগ্রহণ করেছে। ভোটের পর প্রশাসন ও নির্বাচিত প্রতিনিধিরা একসঙ্গে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করবে। কিছু অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য গৌরবের বিষয়।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
নির্বাচনের ফলাফলের পর শিবির সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ, সেবা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে তাদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, শিক্ষার মান, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম উন্নয়নে নির্বাচিত প্যানেলের কাজকে সবাই নজরদারিতে রাখবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
৩৩ বছরের বিরতির পর অনুষ্ঠিত জাকসু নির্বাচনে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের চমকপ্রদ বিজয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা যোগ করেছে। ২৫ পদের মধ্যে ২০টিতে জয়, ভিপি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিজয় এবং বাকি পদে বাগছাস ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অংশগ্রহণে নির্বাচন আরও বৈচিত্র্যময় ও সুষ্ঠু হয়েছে।
নির্বাচনের ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণ, এবং শিক্ষার্থী সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে।
এম আর এম – ১৩১৯,Signalbd.com