বাংলাদেশ

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি খুন: দোকানের ফ্রিজে মিলল মরদেহ

দক্ষিণ আফ্রিকার উইটব্যাংক শহরে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশি প্রবাসী ব্যবসায়ী কাজী মহিউদ্দিন পলাশ (৩৬)। নিখোঁজের তিন দিন পর তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ফ্রিজ থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

হত্যাকাণ্ডের বিবরণ

দক্ষিণ আফ্রিকা পুলিশ জানায়, পলাশকে তার মালাউই (দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকার একটি দেশ) নাগরিক এক কর্মচারী হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে। পরে মরদেহ ফ্রিজে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। হত্যার পর থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক রয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।

পলাশের পরিবারের প্রতিক্রিয়া

নিহত কাজী মহিউদ্দিন পলাশ নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের গাবুয়া গ্রামের বাসিন্দা মরহুম কাজী আমিনুল উল্যাহর ছেলে। তিনি দুই সন্তানের জনক। পলাশের ভাই পল্লী চিকিৎসক কাজী আলমগীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, পলাশ প্রায় ১৪ বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। তার মালাউই কর্মচারী তাকে নির্মমভাবে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে এবং মরদেহ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখে। আমরা তিন দিন তার কোনো খোঁজ পাইনি, ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরে পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ঘটনা উদঘাটন করে। তবে অভিযুক্ত এখনো পলাতক।

স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরিবারের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ১৪ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি দেন কাজী মহিউদ্দিন পলাশ। তার স্ত্রী ও দুটি ছোট সন্তান রয়েছে। তার মৃত্যুতে পরিবারসহ গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে পরিবার।

প্রবাসী কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া

দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় কমিউনিটি নেতারা বলেন, এই ধরনের ঘটনা প্রবাসীদের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের হুমকি। তারা সরকারের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন।

সিসিটিভি ফুটেজের গুরুত্ব

পুলিশ জানায়, পলাশের দোকানে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। ফুটেজ পর্যালোচনা করে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে, অভিযুক্ত কর্মচারী পলাশকে আঘাত করে এবং মরদেহ ফ্রিজে লুকিয়ে রাখে। এই তথ্য তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া

পলাশের পরিবার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে। তারা জানান, দক্ষিণ আফ্রিকার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। মরদেহ দেশে আনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে করোনার কারণে বিমান চলাচলে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা

দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশি প্রবাসীরা বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তবে দেশটিতে অপরাধের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও বাংলাদেশ দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগ প্রয়োজন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

কাজী মহিউদ্দিন পলাশের হত্যাকাণ্ড প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এক বড় ধরনের শোকের সংবাদ। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কতটা জরুরি। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি নেতাদের সম্মিলিত উদ্যোগে প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তবেই আমরা এই ধরনের নির্মম হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধ করতে পারব।

MAH – 12773,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button