সাগর থেকে ৫ ট্রলারসহ ৩০ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি

কক্সবাজারের টেকনাফে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিকটবর্তী সাগরে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি অন্তত ৩০ জন বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। ঘটনা ঘটে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে। এ সময় পাঁচটি মাছ ধরার ট্রলারও তাদের সঙ্গে নিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
ঘটনার বিস্তারিত
টেকনাফ পৌর বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ জানান, ওই সময় সেন্টমার্টিনের দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের ২০ থেকে ৩০টি ট্রলারের জেলেরা মাছ ধরছিল। হঠাৎ করে আরাকান আর্মির সদস্যরা দুইটি স্পিডবোট নিয়ে সেখানে আসে এবং অস্ত্রের মুখে জেলেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এরপর তারা পাঁচটি ট্রলারসহ অন্তত ৩০ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায়।
মালিকদের মধ্যে তিনজন টেকনাফ পৌর এলাকার এবং দুইজন শাহপরীরদ্বীপের বাসিন্দা। ঘটনার পরই বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়েছে। তবে এখনো ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের সঠিক সংখ্যা নিশ্চিত নয়।
কোস্ট গার্ডের টেকনাফ স্টেশনের ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাহউদ্দিন রশীদ তানভীর জানান, খবরটি বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছেন এবং ঘটনার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে।
প্রেক্ষাপট ও পূর্বের ঘটনার বিবরণ
এটি নতুন কোনো ঘটনা নয়। ৫ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ইতিমধ্যেই ৮১ জন জেলেকে ১৩টি ট্রলারের সঙ্গে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি। এর মধ্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের প্রচেষ্টায় কয়েক দফায় ১৮৯ জন জেলে এবং ২৭টি নৌযান ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে মোট ৩২৫ জন বাংলাদেশি জেলেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে। বর্তমানে ধরে নেওয়া জেলেদের নির্দিষ্ট অবস্থান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত নয়।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশের জেলেদের নিরাপত্তা ও প্রাণহানির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কক্সবাজার এবং টেকনাফ এলাকার জেলেরা অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে মাছ ধরার কাজে নামছেন। স্থানীয় বোট মালিক ও জেলেরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা হলে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতি নয়, মানসিক চাপও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থা ও কোস্ট গার্ডের তরফে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাঁরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের চেষ্টা করছেন।
আন্তর্জাতিক ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার প্রেক্ষাপট
মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এ ধরনের কর্মকাণ্ড পূর্বে অনেকবার ঘটেছে। বঙ্গোপসাগরে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের ঘটনার নজরদারি এবং কূটনৈতিক চাপে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বিশেষ করে ট্রলার ও জেলেদের ধরে নেওয়ার ঘটনা স্থায়ী ভাবে চলতে থাকলে, বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমানা ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও করণীয়
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে বাংলাদেশকে কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত পদক্ষেপ ত্বরান্বিত করতে হবে।
১. সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সহযোগিতা জোরদার করা।
২. নৌপথে নজরদারি বৃদ্ধি।
৩. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বয় স্থাপন করে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এতে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এবং জেলেদের ওপর সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রভাব কমবে।
শেষ কথা
টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিকটবর্তী সাগর থেকে পাঁচটি ট্রলারসহ ৩০ জন জেলেকে ধরে নেওয়া ঘটনার প্রভাব স্থানীয় জেলেদের জীবিকা ও নিরাপত্তার ওপর পড়েছে। পূর্বের ঘটনার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি প্রতিনিয়ত ঘটছে।
বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থা, কোস্ট গার্ড ও প্রশাসন সজাগ থাকলেও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিস্থিতি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, তা পরবর্তী প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করছে।
এম আর এম – ১২৮১,Signalbd.com