বাংলাদেশ

ভোটকেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা করছে ছাত্রদল : শিবির সেক্রেটারি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। ভোটকেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নুরুল ইসলাম সাদ্দাম। তিনি দাবি করেছেন, বিএনপি-ঘনিষ্ঠ সংগঠন ছাত্রদল ভোটকেন্দ্র দখলের পরিকল্পনা করছে।

মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুর ২টার দিকে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে সাদ্দাম এ অভিযোগ তোলেন।
তিনি লিখেছেন—
“ভোটকেন্দ্র দখলের পাঁয়তারা করছে ছাত্রদল। মনে রেখ, এটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো অপকর্ম করার চেষ্টা করলে চরম মূল্য দিতে হবে। ছাত্ররাই তাদের কেন্দ্রভিত্তিক ভোট পাহারা দেবে ইনশাআল্লাহ।”

ডাকসু নির্বাচন: কেন এত আলোচনায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট হিসেবে বিবেচিত। ২০১৯ সালের পর এই প্রথম ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাই ছাত্ররাজনীতির সব পক্ষেই এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। এবারের নির্বাচনে মোট ২৮টি পদে লড়ছেন ৪৭১ জন প্রার্থী, যার মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন

  • সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী: ৪৫ জন
  • সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে প্রার্থী: ১৯ জন
  • সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী: ২৫ জন

ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে সকাল ৮টায় এবং চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলছে এবং এ পর্যন্ত বেশিরভাগ ভোট কাস্টিং সম্পন্ন হয়েছে।

ভোটকেন্দ্র দখল ইস্যুতে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

শুধু শিবির নয়, অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও একে অপরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ তুলছে। শিবির দাবি করছে যে ছাত্রদল পরিকল্পিতভাবে সহিংসতার দিকে যেতে পারে। অন্যদিকে ছাত্রদল বলছে, শিবির নিজেরা প্রভাব বিস্তার করতে না পেরে এখন মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে।

ছাত্রদলের পক্ষ থেকে একটি লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে:
“আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। কিন্তু শিবিরের হুমকি-ধামকিতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকুক এবং ক্যাম্পাসে শান্তি বজায় রাখুক।”

শিবিরের সেক্রেটারির হুঁশিয়ারি

সাদ্দাম তাঁর পোস্টে আরও উল্লেখ করেছেন—
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কোনো রাজনৈতিক সহিংসতার কেন্দ্র হতে পারে না। শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করাই হবে মূল লক্ষ্য। কেউ যদি ভোটকেন্দ্র দখলের চেষ্টা করে, আমরা তা প্রতিহত করব।”

এই বক্তব্যের পর শিবিরের পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবিও জানানো হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

নির্বাচন কমিশন দাবি করছে, তারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ক্যাম্পাসের প্রহরীরা নির্বাচনী নিরাপত্তায় তৎপর রয়েছে। তবুও ছাত্র সংগঠনগুলোর পারস্পরিক অভিযোগে ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এক জিএস পদপ্রার্থী অভিযোগ করেছেন—
“নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে। কিছু কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের বসতে দেওয়া হচ্ছে না।”

অন্যদিকে কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—
“আমরা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করছি। কোনো প্রার্থী বা সংগঠনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আমরা তা তদন্ত করব।”

ডাকসু নির্বাচনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব

ডাকসু নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বহু জাতীয় নেতা ডাকসু থেকে উঠে এসেছেন। তাই এই নির্বাচনে জয়লাভ করা শুধু ক্ষমতার প্রতীক নয়, ভবিষ্যতের রাজনীতির জন্যও বড় একটি মাইলফলক।

বিশ্লেষণ: কেন ভোটকেন্দ্র দখলের আশঙ্কা?

বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিতে ভোটকেন্দ্র দখল কোনো নতুন ঘটনা নয়। অতীতে দেখা গেছে, বড় সংগঠনগুলো শক্তি প্রদর্শনের জন্য কেন্দ্র দখল করে ভোটের ফলাফল প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। এবারও একই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষকের মতে:

  • ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ছাত্রদল ও শিবিরের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে।
  • উভয় সংগঠনই নিজেদের প্রভাব বাড়াতে চায়।
  • বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক শিথিলতা এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরির সুযোগ করে দেয়।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা কী?

শিক্ষার্থীরা চায়, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে। তারা চায় না ক্যাম্পাসে সহিংসতা হোক। অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন—
“আমরা চাই ন্যায্য নির্বাচন। কেউ যেন প্রভাব খাটাতে না পারে। ডাকসু নির্বাচন আমাদের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নির্ধারণ করবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন সবসময়ই আলোচনায় থাকে। এবারের নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল নিয়ে যে উত্তেজনা শুরু হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে হলে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন কীভাবে শেষ হবে, তা এখন সবার নজরে।

MAH – 12723,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button