মুশফিকুর রহিমের ভাতিজা আহনাফের মরদেহ কক্সবাজার সমুদ্র থেকে উদ্ধার

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হওয়া আহনাফের মরদেহ সোমবার ভোরে উদ্ধার করা হয়েছে। আহনাফ ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের তারকা মুশফিকুর রহিমের বড় ভাইয়ের শ্যালিকার ছেলে।
সি-সেইফ লাইফগার্ডের মাঠ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, স্থানীয়দের খবর পাওয়ার পর লাইফগার্ড সদস্যরা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে মরদেহ শনাক্ত করেছেন। পরে পুলিশ মরদেহটি স্থানীয়ভাবে উদ্ধার করে।
কিভাবে ঘটলো দুর্ঘটনা?
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে, যখন আহনাফ বন্ধুদের সঙ্গে কক্সবাজারে বেড়াতে আসেন। বগুড়া থেকে আসা এই তরুণ সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গোসলে নামেন।
কিছুক্ষণ পরই ঢেউয়ের তোড়ে তাকে ভেসে যেতে দেখা যায়। তার সঙ্গে থাকা দুই বন্ধুকে লাইফগার্ডরা নিরাপদে উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও, গভীর স্রোতের কারণে আহনাফকে সঙ্গে সঙ্গে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
উদ্ধার অভিযান ও লাইফগার্ডের ভূমিকা
সি-সেইফ লাইফগার্ডের সদস্যরা ভোর থেকেই উদ্ধার অভিযানে নিযুক্ত ছিলেন। ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, “আমরা স্থানীয়রা এবং পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়ে সকাল থেকেই উদ্ধার অভিযান চালিয়েছি। শেষপর্যন্ত মরদেহ সাগরের কাছাকাছি একটি অবস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।”
লাইফগার্ড সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজার সমুদ্রের প্রবল ঢেউ ও স্রোত এই ধরনের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
কক্সবাজারে সমুদ্র দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
গত এক বছরে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে অন্তত ১২ জন পর্যটক প্রাণ হারিয়েছেন। সেই সময়ে ৮০ জনকে লাইফগার্ডরা জীবিত উদ্ধার করেছেন। এটি দেখায়, পর্যটকরা সমুদ্রের গভীরতা এবং প্রবল স্রোতের ঝুঁকি বোঝার ক্ষেত্রে সচেতন নন।
এছাড়াও, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে যথাযথ সতর্কীকরণ চিহ্ন থাকা সত্ত্বেও পর্যটকরা প্রায়ই ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামে।
সাম্প্রতিক সমুদ্র দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট
গত ৮ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান (২২) কক্সবাজার সৈকতে নিখোঁজ হন। দুই মাস পেরিয়েও তার কোনো সন্ধান মেলেনি। এই ঘটনা কেবল কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি প্রকাশ করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঢেউ ও স্রোতের ধরন মৌসুমি ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। বর্ষাকাল ও ঝড়ো বাতাসে সৈকতে প্রবল স্রোত সৃষ্টি হয়, যা পর্যটকদের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
পরিবার ও স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
আহনাফের পরিবার গভীর শোকাহত। তার চাচাতো ভাই, মুশফিকুর রহিম জানিয়েছেন, “আমরা এই দুর্ঘটনার খবর শুনে ভীষণ ব্যথিত। আহনাফ ছিল খুবই প্রাণবন্ত ও বন্ধুবৎসল ছেলে। তার আকস্মিক মৃত্যু আমাদের সকলের জন্য এক বড় ধাক্কা।”
স্থানীয়রা জানান, সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আরও সতর্কতা নেওয়া উচিত। অনেকেই মনে করেন, লাইফগার্ড সংখ্যা বৃদ্ধি এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা চিহ্ন স্থাপন করলে এই ধরনের দুর্ঘটনা কমানো সম্ভব।
সমুদ্র নিরাপত্তা: সচেতনতা ও পদক্ষেপ
সি-সেইফ লাইফগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন বারবার পর্যটকদের সতর্ক করে আসছেন। তারা পরামর্শ দেন:
- সমুদ্রের প্রবল ঢেউ বা স্রোতের সময় গোসলে না যাওয়া
- শিশু বা অপরিণত ব্যক্তিদের সঙ্গে সমুদ্রের গভীরে না যাওয়া
- লাইফজ্যাকেট ব্যবহার করা
- লাইফগার্ডের নির্দেশনা মেনে চলা
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পর্যটকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সরকারি নিয়ম-নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ করলে কক্সবাজার সমুদ্রকে নিরাপদ পর্যটন গন্তব্য হিসেবে রক্ষা করা সম্ভব।
আহনাফের স্মরণ
আহনাফের বন্ধু ও সহপাঠীরা তার প্রাণবন্ত এবং বন্ধুভাবাপন্ন ব্যক্তিত্বের কথা স্মরণ করেছেন। তারা বলেন, “আহনাফ খুবই বন্ধুভাবাপন্ন ও সাহসী ছেলে ছিল। আমরা তাকে কখনো ভুলব না।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় আহনাফের বন্ধু এবং সমর্থকরা তার স্মৃতিতে শোকপ্রকাশ করেছেন।
সমুদ্র দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা
বিশ্বের বিভিন্ন সমুদ্র তীরবর্তী দেশে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য কড়া আইন ও নিয়মাবলী রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:
- অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে সমুদ্রের প্রবল ঢেউ এবং স্রোতের সময় গোসলে নামা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
- যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে সৈকতে লাইফগার্ড সবসময় সচল থাকে এবং পর্যটকদের লাইফজ্যাকেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক।
এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি যে, সমুদ্র সৈকতে পর্যটক ও স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক নিয়ম মেনে চলা অপরিহার্য।
আহনাফের আকস্মিক মৃত্যু কেবল তার পরিবার ও বন্ধুদের জন্য নয়, পুরো জাতীয় ক্রিকেট পরিবার এবং কক্সবাজারের পর্যটন সম্প্রদায়ের জন্যও এক গভীর শোকের খবর। সমুদ্রের বিপদ ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে সবাইকে আরও সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।
সি-সেইফ লাইফগার্ড ও স্থানীয় প্রশাসন এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, পর্যটকরা নিজেরা সচেতন হবেন এবং সমুদ্রের স্রোত ও ঢেউয়ের বিপদের প্রতি গুরুত্ব দেবেন।
MAH – 12699, Signalbd.com