রোববার থেকে অনির্দিষ্টকাল গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা পবিসের, বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের শঙ্কা

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) এর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চার দফা দাবিতে আগামী রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য গণছুটিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এই কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে পল্লী বিদ্যুৎ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-দফতর সম্পাদক অঞ্জু রানী মালাকার বলেন, “সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও কোনো বাস্তবায়ন হয়নি। বরং আন্দোলনে যুক্ত কর্মীদের ওপর হয়রানিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।”
চার দফা দাবির বিস্তারিত
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সংবাদ সম্মেলনে যে চারটি দাবি উপস্থাপন করেছেন, সেগুলো হলো:
- আরইবি-পিবিএস একীভূতকরণ অথবা অন্যান্য বিতরণ সংস্থার মতো কোম্পানি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি এবং সব চুক্তিভিত্তিক ও অস্থায়ী কর্মীদের নিয়মিতকরণ।
- ১৭ আগস্ট ২০২৫ থেকে হয়রানিমূলকভাবে চাকরিচ্যুত ও বরখাস্ত হওয়া কর্মীদের পূর্বের কর্মস্থলে পুনর্বহাল।
- জরুরি সেবায় নিয়োজিত লাইনক্রুদের কর্মঘণ্টা নির্ধারণ এবং পাঁচজন লাইনক্রুর পুনর্বহালের ব্যবস্থা।
- পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ।
সরকারের আশ্বাস ও কর্মীদের ক্ষোভ
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কমিটি গঠন হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। আন্দোলনে যুক্ত কর্মীদের চাকরিচ্যুতি, বদলি, বরখাস্তের মতো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে।
নেতারা বলেন, “আমরা বারবার আলোচনার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে শুধু আশ্বাস এসেছে, বাস্তবায়ন হয়নি। এখন কর্মীদের আর কোনো বিকল্প নেই।”
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের আশঙ্কা
দেশের গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের মূল দায়িত্বে আছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। হাজার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী গণছুটিতে গেলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে সেচ মৌসুমে কৃষকরা বিদ্যুৎ সংকটে পড়তে পারেন।
শুধু কৃষিই নয়, শিল্প কারখানা ও ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলোতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। সাধারণ মানুষকেও ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
দীর্ঘদিনের দাবি
পল্লী বিদ্যুৎ কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে চাকরি বৈষম্য দূরীকরণ, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের স্থায়ীকরণ এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। কয়েক মাস আগেও একই দাবিতে কর্মবিরতি পালিত হয়েছিল, তবে তখন সরকারের আশ্বাসে তা স্থগিত করা হয়। কিন্তু এবার কর্মীরা বলেছেন, এইবার তারা পিছু হটবেন না যতক্ষণ না দাবিগুলো কার্যকর হয়।
বিশ্লেষণ: সমাধান জরুরি
শক্তি বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গ্রামীণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় যেকোনো ধরনের বিঘ্ন দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের উচিত দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা।
একজন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, “পল্লী বিদ্যুৎ দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। তাদের আন্দোলন দীর্ঘ হলে বিদ্যুৎ খাতের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ভেঙে পড়বে।”
সমাপ্তি
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন কেবল চাকরি সংক্রান্ত দাবি নয়, বরং সেবার মানের সঙ্গেও সম্পর্কিত। দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে দেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কত দ্রুত সমাধান খুঁজে বের করতে পারবে, নাকি এই আন্দোলন আরও দীর্ঘ হবে?
এম আর এম – ১২০৫, Signalbd.com