আঞ্চলিক

২ মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড সিরাজগঞ্জের ৪ গ্রাম, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

 মাত্র দুই মিনিটের ঝড়ো হাওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চারটি গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছপালা ভেঙে পড়েছে, বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে কাজ করছে প্রশাসন।

ক্ষয়ক্ষতির চিত্র

মাত্র কয়েক মিনিটের প্রাকৃতিক তাণ্ডবে গ্রামের চিত্র পাল্টে যায়। বাতাসের গতিবেগ এতটাই প্রবল ছিল যে কিছু ঘরবাড়ির টিনের চালা উড়ে গিয়ে গাছের ডালে আটকে থাকে। চরচিলগাছা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল আলিম বলেন,
“বৃষ্টির সময় ঘরে ছিলাম, হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে ঝড় শুরু হয়। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোনোরকমে বের হতে পেরেছি। আমাদের ঘর পুরোপুরি ধসে গেছে।”

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম ধুল্লু জানান,
“দুপুর ২টার কিছু পরে গ্রামের পূর্ব দিক থেকে একটি কালো মেঘের মতো ঝড় আসে। দুই মিনিটের মধ্যে শতাধিক ঘরবাড়ি, গাছপালা ও খুঁটি লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়।”

ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছের কারণে রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়ে। অনেক এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত

প্রবল ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় চারটি গ্রামেই বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ডুবে যায় পুরো এলাকা। মোবাইল নেটওয়ার্কেও বিঘ্ন দেখা দিয়েছে।
রতনকান্দি ইউনিয়নের ইউপি কর্মকর্তা জুবায়েল হোসেন জানান, “শুধু চরচিলগাছা গ্রামেই প্রায় ৫০টির মতো ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগকে জানানো হয়েছে, তারা কাজ শুরু করেছে।”

ফসল, খামার ও অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি

শুধু বসতবাড়িই নয়, ঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চাষাবাদেরও। আমন ধানের চারা নষ্ট হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পুকুর, হাঁস-মুরগির খামার এবং বাণিজ্যিক ঘরবাড়ি।
ইটালি গ্রামের খামার মালিক সাহাবুদ্দিন বলেন, “আমার মুরগির খামার সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। প্রায় এক হাজার মুরগি মারা গেছে। এই ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।”

প্রশাসনের তৎপরতা

দুর্যোগের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, “আমরা ইতিমধ্যে পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) কে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি এবং দ্রুত ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

রতনকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক মেরাজ হোসেন মিসবাহ জানান, “ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি চলছে। প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহযোগিতা দেওয়া হবে।”

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য জরুরি ত্রাণ ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপে পুনর্বাসন কার্যক্রম শুরু করা হবে।”

অতীতে এমন দুর্যোগের অভিজ্ঞতা

সিরাজগঞ্জ জেলা বরাবরই প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। প্রতি বর্ষায় নদীভাঙন ও বন্যার সঙ্গে ছোটখাটো ঝড় নিয়মিত ঘটে থাকে। তবে মাত্র দুই মিনিটের এমন ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় অনেক দিন পর দেখা গেল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

চিলগাছা গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা হামিদ আলী বলেন, “৫০ বছরের জীবনে এমন দ্রুতগতির ঘূর্ণিঝড় দেখিনি। সব কিছুই চোখের সামনে উড়ে গেল।”

ক্ষতিগ্রস্তদের দুর্দশা ও পুনর্বাসনের প্রত্যাশা

ঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকেই তাদের ভেঙে যাওয়া ঘরের চালা কুড়িয়ে এনে কোনো রকমে মাথার ওপর ছাউনি দিয়েছেন।
সরকারি ত্রাণ এখনো পুরোপুরি পৌঁছায়নি বলে জানা গেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠানো হয়েছে এবং দ্রুত সহায়তা পৌঁছানোর চেষ্টা চলছে।

ঘটনা সংক্ষেপে:

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নে আজ দুপুর ২টা নাগাদ হঠাৎ একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। মাত্র দুই মিনিট স্থায়ী এ দুর্যোগে চরচিলগাছা, চিলগাছা, বাহুকা ও ইটালি গ্রামের শতাধিক বসতবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। বহু গাছ উপড়ে পড়ে রাস্তা ও বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

মাত্র দুই মিনিটের প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিরাজগঞ্জের চারটি গ্রামের চিত্র বদলে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের চোখে এখন একটাই প্রশ্ন—“এই ক্ষতি কাটিয়ে আমরা আবার কবে ঘুরে দাঁড়াতে পারব?”
প্রশাসন আশ্বাস দিলেও কার্যকর সহযোগিতা ও দ্রুত পুনর্বাসনই এখন সময়ের দাবি।

এম আর এম – ০৩৬০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button