জাকসু নির্বাচনে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছে কমিশনের একাধিক সদস্য। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আয়োজিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে এবং প্রার্থীদের মধ্যে মাদকাসক্ত কেউ না থাকে তা নিশ্চিত করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
নির্বাচনী কমিশনের সিদ্ধান্ত
জাকসু নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব প্রার্থীকে প্রমাণসাপেক্ষে ডোপ টেস্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। পরীক্ষার রিপোর্টের ভিত্তিতেই প্রার্থীদের বৈধতা নিশ্চিত হবে। কমিশনের এক সদস্য বলেন, “আমরা চাই একটি পরিষ্কার, মাদকমুক্ত এবং শৃঙ্খলাপূর্ণ নির্বাচন। তাই ডোপ টেস্ট ছাড়া কোনো প্রার্থী বৈধভাবে অংশ নিতে পারবে না।”
এই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে বলে কমিশন জানিয়েছে।
দীর্ঘ ৩৩ বছর পর নির্বাচন
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে জাকসু নির্বাচন সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক প্রভাব রাখে। তবে ১৯৯১ সালের পর থেকে এত বছর ধরে নির্বাচন হয়নি। অবশেষে ২০২৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবার মোট ২৫টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৭৯ জন প্রার্থী। শীর্ষ পদগুলোতে প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি—সহসভাপতি (ভিপি) পদে ১০ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৯ জন প্রার্থী লড়বেন।
শিক্ষার্থীদের দাবি থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো
প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার বিষয়টি মূলত শিক্ষার্থী ও অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের দাবির পর উঠে আসে। কয়েকজন প্রার্থী এবং ছাত্রসমাজ জোরালোভাবে প্রস্তাব করেন, যাতে কেউ মাদকাসক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে। তাঁদের মতে, মাদকমুক্ত প্রার্থী ছাড়া প্রকৃত নেতৃত্ব গড়ে ওঠা সম্ভব নয়।
এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই কমিশন দ্রুত বৈঠক ডেকে সর্বসম্মতভাবে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য এই উদ্যোগ সময়োপযোগী। তাঁদের মতে, এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা ছড়িয়ে দেবে এবং প্রার্থীদের ভাবমূর্তি আরও পরিষ্কার হবে।
প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতিক্রিয়া ভিন্ন ভিন্ন। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও কিছু প্রার্থী জানিয়েছেন, হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত কিছুটা চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে সামগ্রিকভাবে অধিকাংশ প্রার্থীই একে মাদকমুক্ত রাজনীতি গড়ার ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
একজন ভিপি প্রার্থী বলেন, “আমরা চাই মেধা, যোগ্যতা আর পরিষ্কার ভাবমূর্তির ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা হোক। এই ডোপ টেস্ট আমাদের সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে।”
শিক্ষার্থীদের মতামত
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, ছাত্র রাজনীতিতে মাদককে কোনোভাবেই স্থান দেওয়া উচিত নয়।
এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা চাই আমাদের প্রতিনিধিরা হোক অনুকরণীয়। তারা যদি মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাহলে তারা কীভাবে আমাদের নেতৃত্ব দেবে?”
সম্ভাব্য প্রভাব
ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক হওয়ায় নির্বাচন হবে আরও স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য—এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পদক্ষেপ মাদকবিরোধী সচেতনতায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশেষ করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য এটি হতে পারে একটি অনুসরণযোগ্য উদাহরণ।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
শিক্ষা ও সমাজবিজ্ঞানী বিশ্লেষকরা বলছেন, ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ ইতিবাচক করার জন্য এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তারা মনে করছেন, এমন উদ্যোগ অন্যান্য ক্যাম্পাসেও বাস্তবায়ন করা গেলে ছাত্র রাজনীতির প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা বাড়বে।
একজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেন, “ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা মানে শুধু নির্বাচন নয়, পুরো ক্যাম্পাসে মাদকবিরোধী আন্দোলনের সূচনা।”
সারসংক্ষেপ
দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচন হতে যাচ্ছে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে কমিশনের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই আলোচনায় এসেছে। শিক্ষার্থী ও প্রার্থীরা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তবে এই উদ্যোগ আসলেই কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। ভবিষ্যতে এ সিদ্ধান্ত দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায়ও দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।
এম আর এম – ১১৫৭, Signalbd.com