জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে। এনসিপির নেতারা মনে করছেন, জাতীয় পার্টি গত তিনটি অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে ভূমিকা রেখেছে এবং বর্তমানে সরাসরি ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
রোববার (৩১ আগস্ট) দুপুরে যমুনার সামনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টি এখন আওয়ামী লীগের অংশ হয়ে গেছে। তাদের কার্যক্রম স্থগিত করা জরুরি, যাতে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠু হয়।”
বৈঠকে কারা ছিলেন
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে এনসিপির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। দলের মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ এতে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা এবং আগামি নির্বাচনের নানা দিক তুলে ধরেন। বিশেষ করে, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর দমননীতি ও সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে।
সাম্প্রতিক সহিংসতা ও নুরুল হক নুরের প্রসঙ্গ
এনসিপি তাদের আলোচনায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া রাজনৈতিক সহিংসতার প্রসঙ্গও তুলে ধরে। গত ২৯ আগস্ট রাতে জাতীয় পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষ চলাকালে সেনা ও পুলিশ সদস্যদের লাঠিপেটায় গণ অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তীব্র প্রতিবাদ জানায়। এনসিপি মনে করছে, এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে যে সরকারি সংস্থাগুলো এখনো তাদের পুরোনো কাঠামো ধরে রাখতে চাইছে।
আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “নুরুল হক নুরের ওপর হামলা স্পষ্ট করে দেয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে সক্রিয়। এর আগে গুম ও নিখোঁজের মতো ঘটনায়ও তাদের সম্পৃক্ততা ছিল। এই প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।”
নির্বাচন ও সংবিধান নিয়ে দাবি
বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গেও আলোচনা হয়। এনসিপি নেতারা জানান, জুলাই সনদের ভিত্তিতে আগামি নির্বাচনকে গণপরিষদ নির্বাচন হিসেবে ঘোষণা করা উচিত এবং পরবর্তী সময়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।
এছাড়া, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়। এনসিপি বিশ্বাস করে, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীর হতে পারে।
গুম কমিশন ও জবাবদিহির দাবি
এনসিপি গুম কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করেছে। তারা মনে করে, যারা পূর্ববর্তী সময়ে গুম, অপহরণ ও রাজনৈতিক দমননীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “এবারের নির্বাচন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া যদি নিরপেক্ষ হয়, তবে জনগণ সত্যিকার অর্থে নিজের মত প্রকাশের সুযোগ পাবে। এজন্য জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি।”
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে অভিযোগ
জাতীয় পার্টি সম্পর্কে এনসিপির অভিযোগ, তারা বিগত তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের সহযোগিতা করেছে। এর ফলে জনগণের ভোটাধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং গণতন্ত্রকে দুর্বল করা হয়েছে।
এনসিপি মনে করছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টির কার্যক্রম অব্যাহত থাকলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ন্যায়সংগত প্রতিযোগিতা সম্ভব নয়। তাই সরকারের কাছে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এনসিপির এই দাবি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এসেছে। তাদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতার অংশীদার হিসেবে দেখা হলেও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগের মুখে এর ভূমিকা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
অন্যদিকে, সরকার ও জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে, এনসিপির এই আহ্বান ভবিষ্যতের নির্বাচনী সমীকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
পরিশেষে
সর্বশেষ পরিস্থিতিতে এনসিপির দাবি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকারের পদক্ষেপ ও জাতীয় পার্টির প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভর করবে দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া কোন দিকে মোড় নেবে।
এখন সবার নজর আসন্ন নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপের দিকে। প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—জাতীয় পার্টির কার্যক্রম নিয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাতে দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যে কী প্রভাব পড়ে।
এম আর এম – ১১০৮, Signalbd.com



