বাংলাদেশ রেলওয়ের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এক ব্যতিক্রমী ও প্রশংসনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেত এলাকায় দুটি মসজিদ এবং একটি মন্দিরকে স্থায়ীভাবে জমি বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, এই বরাদ্দকৃত জমির প্রতীকী মূল্য ধরা হয়েছে মাত্র প্রতি প্লট ১,০০১ টাকা, অর্থাৎ তিনটি ধর্মীয় উপাসনালয়ের জন্য মোট ৩,০০৩ টাকায় জমি হস্তান্তর করা হয়েছে।
কোন কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান জমি পেল?
রেলওয়ে থেকে জমি বরাদ্দ পেয়েছে:
খিলক্ষেত রেলওয়ে জামে মসজিদ – ২০.১১ শতাংশ জমি
আন-নূর জামে মসজিদ – ৫.৫২ শতাংশ জমি
খিলক্ষেত সার্বজনীন শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির – ৫.৬২ শতাংশ জমি
মোট জমি হয়েছে ৩১.১৫ শতাংশ, যা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থায়ী ভিত্তি নির্মাণে ব্যবহৃত হবে।
রেলের নিয়ম ভেঙে নজির
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়ার কোনো ধারা নেই। অথচ এইবার সরকার ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত নিয়ে হিন্দু, মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের উপাসনালয়কে জমি দিয়েছে।
এই সিদ্ধান্তকে বলা হচ্ছে “ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত”, যা ভবিষ্যতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম জানিয়েছেন,
“রেলের আইনে কোথাও লেখা নেই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য জমি বরাদ্দ দেওয়া যাবে। তবে বিশেষ বিবেচনায়, হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় সম্প্রীতির স্বার্থে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
কেন এই উদ্যোগ?
খিলক্ষেত এলাকার তিনটি উপাসনালয় দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ রেলওয়ের জমিতে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত ছিল। স্থানীয় জনগণের চাহিদা ও ধর্মীয় গুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদনে স্থায়ী জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন বলেন:
“বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের গর্ব। আমরা চাই সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে উপাসনা করুক। রেলের এই সিদ্ধান্ত সেই সম্প্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে।”
অনুষ্ঠানে কারা ছিলেন?
বুধবার (২৭ আগস্ট) ঢাকার রেলভবনে অনুষ্ঠিত আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন:
- রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান
- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার
- ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন
- প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী শেখ মইনউদ্দিন
- প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম
- রেলপথ সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম
- রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন
ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য উদাহরণ
এই পদক্ষেপকে বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা স্পষ্টভাবে বলেছেন,
“বাংলাদেশের মাটিতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই। যারা চেষ্টা করবে, তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।”
মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন:
“বাংলাদেশ ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ সব ধর্মের মানুষের জন্য সমান। ধর্মীয় সম্প্রীতি আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এই উদ্যোগ তারই প্রতিফলন।”
হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ বার্তা
হিন্দু সম্প্রদায়ের বেহাত হয়ে যাওয়া দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে সরকার কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা। তিনি বলেন:
“যেসব সম্পত্তি নিয়ে কোনো মামলা নেই, সেগুলো উদ্ধারে সরকার কাজ করবে। এটা আমাদের অঙ্গীকার।”
রেলের জমি বিতর্ক ও নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশ রেলওয়ের জমি বহু বছর ধরে দখল, লিজ ও আইনগত জটিলতার কারণে আলোচনায় থাকে। তবে এবার ধর্মীয় সম্প্রীতির স্বার্থে গৃহীত এই পদক্ষেপ সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই ধরনের বরাদ্দ ভবিষ্যতে খুব সীমিতভাবে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে দেওয়া হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম-হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় থাকলেও বিভিন্ন সময়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন উদ্যোগ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ধর্ম বিষয়ক গবেষকরা মনে করেন,
“ধর্মীয় সম্প্রীতি শুধু কথায় নয়, কাজে প্রতিফলিত হওয়া উচিত। রেলওয়ের এই পদক্ষেপ সেই প্রত্যাশার প্রতিফলন।”
সংক্ষেপে মূল পয়েন্টগুলো:
✔ ৩টি উপাসনালয়ের জন্য জমি বরাদ্দ (২ মসজিদ + ১ মন্দির)
✔ প্রতীকী মূল্য: প্রতি প্লট ১,০০১ টাকা, মোট ৩,০০৩ টাকা
✔ মোট জমি: ৩১.১৫ শতাংশ
✔ রেলের নিয়ম ভেঙে প্রথমবারের মতো অনুমোদন
✔ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য রক্ষার অনন্য উদাহরণ
ভবিষ্যতের জন্য দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশ সরকার ও রেলওয়ের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে একটি ঐতিহাসিক উদ্যোগ। এটি শুধু জমি দেওয়ার ঘটনা নয়; বরং বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতীক, যা আগামী প্রজন্মকে শান্তি, সহনশীলতা ও ঐক্যের শিক্ষা দেবে।
MAH – 12512 , Signalbd.com



