বাংলাদেশ

ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন, পরের সরকারে নির্বাচিত বা নিযুক্ত কোনো পদে আমি থাকব না: প্রধান উপদেষ্টা

দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফের নিশ্চিত করেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। একইসঙ্গে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, নির্বাচনের পর গঠিত সরকারে তিনি কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত পদে থাকবেন না।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেসারাট নিউজ-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি এসব মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি নির্বাচন আয়োজন, গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট, সংস্কার পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক রূপরেখা নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন।

নির্বাচনের সময়সূচি ও প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা

নিবন্ধে ড. ইউনূস বলেন, তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা। তিনি জানান, দেশের প্রতিটি বৈধ ভোটার যাতে ভোট দিতে পারে, প্রবাসীরা সহ, সেটিই তাদের অঙ্গীকার।

তিনি আরও যোগ করেন, “আমি বারবার বলেছি, জাতীয় নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হবে। এরপর যে সরকার আসবে, সেখানে আমাকে কোনো নির্বাচিত বা নিযুক্ত ভূমিকায় দেখা যাবে না।”

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্ব গ্রহণের সময়ের পরিস্থিতি

প্রধান উপদেষ্টা নিবন্ধে স্মরণ করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সূচনা মুহূর্তের কথা। তিনি জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশজুড়ে অব্যবস্থাপনা, প্রশাসনের ভাঙন, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা স্পষ্ট ছিল।

তার ভাষায়, পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালন করছিল না, অর্থনীতি ভেঙে পড়েছিল, গণতন্ত্র হুমকির মুখে ছিল। তবে তিনি জোর দেন, ধীরে ধীরে বিভিন্ন খাত পুনর্গঠনের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।

রাজনৈতিক দল, সশস্ত্র বাহিনী ও জনগণের ভূমিকা

ড. ইউনূস বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর যেসব রাজনৈতিক দল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল, তাদের পাশাপাশি নতুন গঠিত দলগুলোও নতুন শক্তি ও ধারণা নিয়ে সামনে এসেছে।

তিনি সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকাও বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। তার মতে, ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের সময় সেনারা নিরপেক্ষ ও পেশাদার আচরণ করায় একটি ভয়াবহ গণহত্যা এড়ানো গেছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

তরুণ প্রজন্ম ও ‘জেনারেশন জেড’-এর বিপ্লব

প্রধান উপদেষ্টা নিবন্ধে তরুণ সমাজের ভূমিকাকে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার আন্দোলন থেকেই এই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছিল, যা মূলত বিশ্বের প্রথম “জেনারেশন জেড বিপ্লব” হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেয়েছে।

ড. ইউনূস মনে করেন, এই আন্দোলন তরুণদের জন্য একটি আদর্শ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা শুধু বাংলাদেশ নয়, যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও বৈষম্যের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সংস্কার ও সাংবিধানিক সংশোধনের পরিকল্পনা

নির্বাচনের পাশাপাশি সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও কাজ করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ড. ইউনূস জানান, বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সংস্কার প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সাংবিধানিক সংশোধনী, যা বাংলাদেশকে আর কখনো স্বৈরাচারী শাসনের দিকে না ফেরার নিশ্চয়তা দেবে। তার মতে, একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক কাঠামো গড়তে এই পদক্ষেপ অপরিহার্য।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা

ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ইতিবাচকভাবে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, দ্য ইকোনমিস্ট বাংলাদেশকে ২০২৪ সালের “সেরা দেশ” হিসেবে ঘোষণা করেছিল, যা গণতন্ত্রে উত্তরণের একটি প্রতীকী স্বীকৃতি।

তিনি মনে করেন, তখন দেশ অর্থনীতি পুনর্গঠন, নির্বাচন প্রস্তুতি এবং চুরি যাওয়া সম্পদ উদ্ধারে ব্যস্ত থাকলেও বিশ্বের চোখে বাংলাদেশের সাফল্য স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

শেষ কথা 

প্রধান উপদেষ্টা নিবন্ধের শেষে বলেন, “এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে আমাদের সঙ্গে যারা আছেন, তাদের সবার দায়িত্ব অপরিসীম। তারাই আমাদের সর্বোত্তম আশা— হয়তো আমাদের শেষ আশা।”

বাংলাদেশ এখন এক ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে। ফেব্রুয়ারির নির্বাচন দেশকে কোন পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিশ্রুতি, রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ এবং জনগণের আস্থার ওপর।

এম আর এম – ০৯৭৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Advertisement
Back to top button