চব্বিশ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আবারও উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মশাবাহিত এ রোগে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ৩১১ জন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১১০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
ডেঙ্গুতে নতুন করে মৃত্যু ও আক্রান্তের তথ্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম বৃহস্পতিবার জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জন রোগী ডেঙ্গুতে মারা গেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন নারী ও দুইজন পুরুষ।
এ নিয়ে চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১০ জনে। এর মধ্যে ৬৪ জন পুরুষ এবং ৪৬ জন নারী।
এছাড়া একই সময়ে সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩১১ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় ১১২ জন এবং ঢাকার বাইরে বিভিন্ন বিভাগে ১৯৯ জন।
কোন বিভাগে কত রোগী ভর্তি
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রিপোর্টে বলা হয়, গতকাল বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঢাকার বাইরের বিভাগগুলোতে সংখ্যাটা তুলনামূলক বেশি।
- ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশন ছাড়া): ৪২ জন
- চট্টগ্রাম বিভাগে: ৩৭ জন
- বরিশাল বিভাগে: ৮২ জন
- খুলনা বিভাগে: ১৫ জন
- রাজশাহী বিভাগে: ২১ জন
- ময়মনসিংহ বিভাগে: ২ জন
সবমিলিয়ে চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ২৭ হাজার ৭৮২ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গুর প্রকোপ ও পূর্বপটভূমি
বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ কয়েক বছর ধরে বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে এডিস মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে পানি জমে থাকা জায়গা এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণ ডেঙ্গু বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্ষার সময় মশার বংশবিস্তার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।
মৃত্যুহার ও আক্রান্তের তুলনামূলক চিত্র
গত বছরের একই সময়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি ছিল। তবে চলতি বছরও পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
২০২৪ সালে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১৪০ জনের ওপরে। এবার সংখ্যা কিছুটা কম হলেও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মৌসুমের শেষ দিকে রোগীর সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা।
বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, “ডেঙ্গু প্রতিরোধে চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানো যেমন দরকার, তেমনি দরকার সচেতনতা এবং পরিচ্ছন্নতা। প্রতিটি বাড়ি, অফিস এবং নির্মাণাধীন ভবনে জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলতে হবে।”
হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি ও চ্যালেঞ্জ
ঢাকা ও বিভাগীয় শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চাপ বাড়ছে। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অনেক হাসপাতালে বেড সংকট তৈরি হচ্ছে।
একইসঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে চিকিৎসকরা বাড়তি সময় কাজ করছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজনে অস্থায়ী বেড বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সরকারের পদক্ষেপ
সরকার জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনগুলোকে এডিস মশা দমন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে বলা হয়েছে। নিয়মিত ফগিং, লার্ভিসাইড ছিটানো এবং জনগণকে সচেতন করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর দাবি, জনসচেতনতা ছাড়া শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।
ভুক্তভোগী পরিবারের দুঃখ ও উদ্বেগ
ডেঙ্গুতে মৃত ব্যক্তিদের পরিবার বলছেন, রোগটি এত দ্রুত জটিল হয়ে যায় যে অনেক সময় চিকিৎসার সুযোগই পাওয়া যায় না। অনেকেই হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
একজন ভুক্তভোগীর স্বজন বলেন, “আমরা বুঝতেই পারিনি যে জ্বরটা ডেঙ্গু। যখন বুঝেছি, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে।”
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পাশাপাশি জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ বজায় রাখা, জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা এবং সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ছাড়া ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। তাই এখনই সচেতনতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ জরুরি।
এম আর এম – ০৯৭২, Signalbd.com