ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে নিজের রাজনৈতিক ভাবনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বার্তা দিয়েছেন ছাত্রদল প্যানেলের ভিপি প্রার্থী মো. আবিদুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান তিনি এবং শিক্ষার্থীদের পাশে থেকে নতুন দিনের রাজনীতি গড়ে তুলবেন।
আবিদের ঘোষণা ও বক্তব্য
বুধবার দুপুরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে আবিদুল লেখেন, তার জীবনের রাজপথে সংগ্রামের অভিজ্ঞতা এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের নানা দিক। তিনি বলেন, “আমি আপনাদের কখনও ছেড়ে যাবো না। ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন আনার জন্য যে যাত্রা শুরু করেছি, সেটি আরও অনেক দূর পর্যন্ত চলবে।”
ভোটের দিন থেকেই বিভিন্ন অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্ত করলে সত্য বেরিয়ে আসবে। পাশাপাশি তিনি শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান ভোটে অংশগ্রহণের জন্য এবং প্রতিশ্রুতি দেন নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিটি প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য কাজ করে যাওয়ার।
রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতা
নিজের রাজনৈতিক যাত্রার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবিদুল বলেন, তিনি কখনো পরিকল্পনা করে রাজনীতিতে আসেননি। আন্দোলন আর সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় তিনি রাজপথে নেমেছেন, যা তাকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছে। তিনি মনে করেন, এই অভিজ্ঞতাই তাকে ছাত্র রাজনীতিকে নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
নির্বাচনী দিন ও অভিযোগ
আবিদুল দাবি করেন, ভোটের দিন থেকেই তিনি বিভিন্ন কেন্দ্রে সমস্যা ও অনিয়ম লক্ষ্য করেছেন। মিডিয়ার মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তবু তিনি বিশ্বাস করেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযোগগুলো যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
তার মতে, ভোটারদের উপস্থিতি প্রমাণ করে শিক্ষার্থীরা পরিবর্তন চান। আর সেই পরিবর্তন আনতে হলে নির্বাচনী রাজনীতি শুধু প্রতিযোগিতায় সীমাবদ্ধ না থেকে শিক্ষার্থীদের বাস্তব সমস্যার সমাধানেও ভূমিকা রাখতে হবে।
শিক্ষার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
নিজের পোস্টে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে ধন্যবাদ জানান ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার জন্য। মাত্র ২০ দিনের প্রচারণায় তিনি চেষ্টা করেছেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছাতে। যদিও সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি, তবু তিনি মনে করেন এই অল্প সময়ে শিক্ষার্থীরা তার প্রতি আস্থা দেখিয়েছেন।
তিনি লেখেন, “আমি আপনাদের যথেষ্ট কাজ করতে পারিনি, তবু আমি কখনও আপনাদের ছেড়ে যাব না। ভবিষ্যতে আরও বেশি পরিশ্রম করে আমি সেই আস্থা অর্জন করব।”
ইতিবাচক পরিবর্তনের অঙ্গীকার
আবিদুল প্রতিশ্রুতি দেন, তার নির্বাচনী ইশতেহারে যা কিছু ছিল, তা তিনি ছাত্রনেতা হিসেবেই পূরণে চেষ্টা করবেন। প্রশাসনের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে কাজ করবেন এবং রাজপথে সক্রিয় থাকবেন। তিনি মনে করেন, ছাত্র রাজনীতির প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করা, যা শুধুমাত্র ইতিবাচক পরিবর্তনের মাধ্যমে সম্ভব।
আবিদুল ইসলাম খান জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আলোচনায় আসেন। সেই আন্দোলনে তার দেওয়া অনুরোধ—“প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না”—শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। ডাকসু নির্বাচনে হেরে গেলেও তার সাম্প্রতিক পোস্টে তিনি জানালেন, শিক্ষার্থীদের তিনি ছেড়ে যাননি এবং যাবেন না।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকদের মতে, আবিদের এই বার্তা ছাত্র রাজনীতিতে ভিন্ন ধরনের ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। তিনি নির্বাচনে হেরে গেলেও পরাজয়কে শেখার সুযোগ হিসেবে নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থী সোশ্যাল মিডিয়ায় তার এই বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির দীর্ঘদিনের সংকট কাটিয়ে উঠতে হলে এ ধরনের ইতিবাচক বার্তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
শিক্ষাবিদরা বলছেন, ছাত্র রাজনীতিকে সহিংসতা ও বিভাজনের বাইরে এনে শিক্ষার্থীদের কল্যাণমুখী করে তুলতে হবে। আবিদের মতো তরুণ নেতাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি সেই পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, “নেতৃত্বে সততা ও প্রতিশ্রুতিই ছাত্র সমাজকে একত্রিত করতে পারে। আবিদের বক্তব্য শিক্ষার্থীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার পথ তৈরি করতে পারে।”
ডাকসু নির্বাচনে হেরে গেলেও আবিদুল ইসলাম খান তার যাত্রাকে শেষ হিসেবে দেখছেন না। বরং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেকে ছাত্র রাজনীতির ইতিবাচক পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তার বার্তা শিক্ষার্থীদের কাছে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই ইতিবাচক অঙ্গীকার কতটা বাস্তবায়িত হয় এবং তা কি ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎকে নতুন পথে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে।
এম আর এম – ১২৬৭,Signalbd.com
				
					


