বাংলাদেশ

মালয়েশিয়ার স্থানীয় শ্রমিকদের মতো সুবিধা পাবেন বাংলাদেশিরা: প্রেস সচিব

Advertisement

প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, বাংলাদেশি শ্রমিকরা মালয়েশিয়ায় স্থানীয়দের সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বৈধতা, নিরাপত্তা ও শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানসহ নানা বিষয় নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সফর ফলপ্রসূ হয়েছে।

মালয়েশিয়ার সফরের ফলাফল: বাংলাদেশের শ্রমিকদের সুবিধা প্রসারিত

প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকরা এবার থেকে স্থানীয় শ্রমিকদের মতো সমান সুযোগ-সুবিধা পাবেন। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর একটি ‘ল্যান্ডমার্ক ট্যুর’ ছিল, যা বাংলাদেশের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সুসম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।

তিনি আরও জানান, মালয়েশিয়ায় যারা বাংলাদেশি রয়েছেন, তাদের মধ্যে অনেকের ইংরেজি দুর্বল এবং মালয় ভাষা শিখতে সমস্যার সম্মুখীন। তাই তারা এখন থেকে বাংলা ভাষায় অভিযোগ দাখিলের সুবিধা পাবেন, যা প্রবাসী কল্যাণে নতুন দিকনির্দেশনা তৈরি করবে।

অবৈধ ও কাগজপত্রবিহীন শ্রমিকদের বৈধতা

প্রেস সচিব জানান, মালয়েশিয়ায় যে বাংলাদেশি শ্রমিকরা অবৈধভাবে রয়েছেন বা কাগজপত্রবিহীন, তাদের বৈধ করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা হবে। প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এই বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, আগামী কিছু সময়ের মধ্যে এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হবে এবং শ্রমিকদের বৈধতা নিশ্চিত হবে।

নিরাপত্তারক্ষী ও কেয়ার গিভারের নিয়োগ

বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি করতে মালয়েশিয়ায় নিরাপত্তারক্ষী ও কেয়ার গিভারের পদে নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রেস সচিবের মতে, এই পদগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগের মাধ্যমে দেশে প্রেরিত প্রবাসী কর্মীর মান উন্নয়ন হবে।

শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান: গ্র্যাজুয়েট প্লাস প্রোগ্রাম

মালয়েশিয়ায় প্রায় ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। শিক্ষার্থীরা যাতে পড়াশোনা শেষে দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও কম্পানিতে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই ‘গ্র্যাজুয়েট প্লাস’ প্রোগ্রাম চালু করার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। প্রেস সচিব জানিয়েছেন, মালয়েশিয়া সরকার এই প্রোগ্রামে সহযোগিতা করবে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।

বাণিজ্যিক অগ্রগতি ও ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট

শফিকুল আলম আরও জানান, বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত করতে দ্রুত ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (FTA) চুক্তি করার পরিকল্পনা রয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে ৩ বিলিয়ন ডলারের খাদ্য ও অন্যান্য পণ্য আমদানি হয়। এফটিএ কার্যকর হলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, ইতিমধ্যে জাপান ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে FTA নিয়ে আলোচনা চলছে, এবং দ্রুতই মালয়েশিয়ার সঙ্গে এ বিষয়ে সমঝোতা হবে।

সফরের সার্বিক ফলাফল ও বিশেষজ্ঞের মতামত

প্রেস সচিব এই সফরকে ‘ফলপ্রসূ’ এবং ‘ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিক নিরাপত্তা, সমান সুযোগ-সুবিধা এবং বৈধতার নিশ্চয়তা মিলবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি প্রবাসী কল্যাণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের বৈদেশিক মজুরি আয় বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলা ভাষায় অভিযোগ দাখিলের সুবিধা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য গ্র্যাজুয়েট প্লাস প্রোগ্রাম মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

প্রেস সচিব জানান, আগামীতে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য আরও নানা সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া বাণিজ্য, শিক্ষা এবং প্রবাসী কল্যাণ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়ে নিয়মিত আলোচনা চলবে। ফলে প্রবাসী কর্মী ও শিক্ষার্থীরা নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ জীবনযাপন করতে পারবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ ও ফলপ্রসূ হবে।

শেষ কথা 

মালয়েশিয়া সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বৈধতা, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও বাণিজ্যিক অগ্রগতি—সবই এই সফরের মূল লক্ষ্য। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি প্রবাসী কল্যাণে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।

এম আর এম – ০৮৭১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button