যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় এক নারী চিকিৎসাকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে বাড়ির মালিকের ছেলে হৃদয় হোসেনকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভিযোগে বলা হয়, অভিযুক্ত যুবক সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে হঠাৎ করে ওই নারীর কক্ষে প্রবেশ করে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে এবং কাউকে জানালে হত্যার হুমকি দেয়।
ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ
বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাস্টাররোলে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কর্মরত এক নারী যশোর জেলার বাঘারপাড়া উপজেলার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। বাসাটি সিরাজুল ইসলাম নামের একজনের, যিনি একজন স্থানীয় বাসিন্দা। সোমবার (৪ আগস্ট) রাতে তার ছেলে হৃদয় হোসেন আকস্মিকভাবে ওই নারীর রুমে প্রবেশ করে এবং মুখ চেপে ধরে তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।
ভুক্তভোগী নারী জানান, ঘটনার সময় তিনি একা ছিলেন এবং হঠাৎ করেই অভিযুক্ত হৃদয় ঘরে ঢুকে পড়ে। ঘটনার পরপরই তিনি আতঙ্কে থাকলেও ভোররাতে সাহস সঞ্চয় করে বাঘারপাড়া থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশি অভিযান ও গ্রেপ্তার
অভিযোগ পাওয়ার পর বাঘারপাড়া থানা পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে হৃদয় হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হৃদয় অপরাধের কথা স্বীকার করেছে। তাকে থানায় রাখা হয়েছে এবং পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
বাঘারপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, “আমরা অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নিয়েছি এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছি। ঘটনাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে।”
ডাক্তারি পরীক্ষা ও চিকিৎসা সেবা
অভিযোগের ভিত্তিতে ওই নারীকে পুলিশ হেফাজতে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তন্ময় সরকার জানান, “নারীর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে এবং নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন এবং শারীরিকভাবে স্থিতিশীল।”
পারিপার্শ্বিক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ
এই ঘটনার পর স্থানীয় মহলে ক্ষোভ ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীরা নারী নির্যাতনের এমন ঘটনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, “ভাড়াটিয়া একজন অসহায় নারী। তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাড়ির মালিক পক্ষের দায়িত্ব ছিল। উল্টো তাদের ঘরের ছেলের কাছেই এমন নির্যাতনের শিকার হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।”
পেছনের গল্প: ভাড়াটিয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
ঘটনাটি নতুন করে ভাড়াটিয়া নারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অনেক ক্ষেত্রেই ভাড়াটিয়ারা বাড়ির মালিক পক্ষের অসদাচরণের শিকার হন, কিন্তু ভয় ও সামাজিক অপবাদে মুখ বন্ধ রাখেন। বিশেষ করে নারী ভাড়াটিয়ারা পরিবারবিহীন থাকলে নিরাপত্তাহীনতা বেড়ে যায়। ফলে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার নিয়ম ও ভাড়াটিয়া রেজিস্ট্রেশনের মতো বিষয়গুলোর গুরুত্ব এখন আগের চেয়ে বেশি।
আগের এমন ঘটনার নজির
যশোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমন আরও কিছু ঘটনার নজির রয়েছে। কয়েক মাস আগেই খুলনায় এক নারী ভাড়াটিয়াকে বাড়িওয়ালার ছেলে উত্যক্ত করার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়। সেসব ঘটনায় বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতির কারণে অপরাধীরা বারবার অপরাধ করতে উৎসাহী হয়ে উঠে। তাই আইনি প্রক্রিয়া দ্রুত করার দাবি উঠছে নানা মহলে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
নারী অধিকারকর্মী ও আইনজীবী সালমা রহমান বলেন, “ভাড়াটিয়া নারীরা প্রায়শই এমন ঝুঁকির মুখে থাকেন, যেখানে বাড়ির মালিক কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের দ্বারা হয়রানির শিকার হন। এ ধরনের ঘটনার দ্রুত বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিণতি দেখা যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “বাড়ি ভাড়া দেওয়ার সময় সরকারি রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা এবং নারী ভাড়াটিয়াদের জন্য হেল্পলাইন বা নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন এখন সময়ের দাবি।”
“ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন”—ওসি, বাঘারপাড়া থানা
শেষ কথা
যশোরের এই ঘটনা আমাদের সমাজের একটি গভীর সমস্যার প্রতিফলন — যেখানে নারীরা নিজের ভাড়া বাসাতেও নিরাপদ নন। এটি শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি বড় সংকেত। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রশাসন, বাড়ির মালিক এবং সমাজকে সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব নিতে হবে।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত বিচার এবং সামাজিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার ওপর।
এম আর এম – ০৭০৩, Signalbd.com



