বাংলাদেশ

এবার পদ্মা সেতু রক্ষা প্রকল্প বাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কে হাজারো মানুষ

Advertisement

শরীয়তপুরের জাজিরায় পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে নতুন করে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বসতঘর ও দোকানসহ ২৬টি স্থাপনা। ঝুঁকিতে রয়েছে অন্তত ৬০০ পরিবার। স্থানীয়দের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে টেকসই প্রতিরোধ ব্যবস্থা না নিলে বিপন্ন হবে পুরো জনপদ।

ঘটনার সারসংক্ষেপ

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ইতোমধ্যে প্রায় ১৩০ মিটার বাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ২৬টি ঘরবাড়ি ও দোকান ইতিমধ্যে পদ্মার পানিতে হারিয়ে গেছে, ভাঙনের আতঙ্কে কাঁপছে অন্তত ৬০০ পরিবার। প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ভাঙনরোধে চেষ্টা চালালেও স্থানীয়দের দাবি, স্থায়ী সমাধান ছাড়া এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি নেই।

ভাঙনের বর্তমান অবস্থা

গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পানির প্রবল স্রোতের কারণে পদ্মা সেতু রক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত বাঁধের একটি বড় অংশ হঠাৎ করেই নদীতে ধসে পড়ে।
বিশেষ করে আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি—এই তিনটি গ্রাম এখন সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

সোমবার (৭ জুলাই) বিকেল থেকেই ভাঙন প্রকট আকার ধারণ করে। মাত্র দুই ঘণ্টার ব্যবধানে নদীতে বিলীন হয় ১৬টি বাড়ি ও ১০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভাঙনের আশঙ্কায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয় আরও ১৫টি দোকান।

স্থানীয়দের আতঙ্ক ও উদ্বেগ

ভাঙনের তীব্রতায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা সুমন হাওলাদার জানান, “গত বছর থেকেই এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর গতিপথ বদলে পাড়ের কাছাকাছি চলে আসায় এমন অবস্থা। আমরা খুব আতঙ্কে আছি। সরকার যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে যাবে।”

একইসঙ্গে বাজার ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম জানান, “ভাঙনের কারণে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়েই মালামাল সরিয়ে নিচ্ছি। সরকারকে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।”

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা

ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে ৯০ জন শ্রমিক নিয়োজিত করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে ভাঙনপ্রবণ এলাকায় প্রায় ১ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে।

বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তারেক হাসান জানান, “১৩০ মিটার বাঁধ নদীতে বিলীন হয়েছে। পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। আমরা জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছি। শিগগিরই আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা ও পুনর্বাসন উদ্যোগ

ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন থেকে কিছু সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
জাজিরা উপজেলার ইউএনও কাবেরী রায় জানান, “ঘর সরিয়ে নেওয়া পরিবারগুলোকে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। যাদের ঘর নদীতে তলিয়ে গেছে, তাদের দুই বান টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুনর্বাসনের জন্য আলাদা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

তবে স্থানীয়দের মতে, এসব তাৎক্ষণিক সহায়তা যথেষ্ট নয়। তারা টেকসই বাঁধ নির্মাণ ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার দাবি জানিয়েছেন।

প্রকল্পের ইতিহাস ও পূর্ববর্তী ধস

২০১০-২০১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে। মাঝিরঘাট থেকে পূর্ব নাওডোবা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই বাঁধ নির্মাণ করা হয় কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড হিসেবে।

তবে গত বছরের নভেম্বরেও একই বাঁধে ধস দেখা দেয়। ওই সময় ১০০ মিটার অংশ ধসে পড়ে এবং সিসি ব্লকগুলো নদীতে তলিয়ে যায়। সে সময় পানি উন্নয়ন বোর্ড ২ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার মাধ্যমে সংস্কারের কাজ শুরু করে।

এ বছর কোরবানির ঈদের দিন ভোরে ফের একই অংশে ধস দেখা দেয়, যার ফলে নতুন করে ২৫০ মিটার অংশ নদীতে চলে যায়।

বিশেষজ্ঞ মত ও পরবর্তী করণীয়

বহুবার ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করা হলেও ফলাফল কার্যকর হয়নি। নদীর গতি, মাটির গঠন এবং প্রকৌশলগত দুর্বলতার কারণে এমন বিপর্যয় ঘটছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

তারা বলছেন, শুধু জিও ব্যাগ দিয়ে নদীর ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই পরিকল্পনার ভিত্তিতে নির্মিত বাঁধ এবং পানি প্রবাহের সঠিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা।

সারসংক্ষেপ  

পদ্মা সেতু বাংলাদেশের জন্য একটি গর্বের প্রতীক হলেও, তার আশপাশের অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা গেলে এই গর্ব একসময় কান্নায় পরিণত হতে পারে।

এখন সময় টালমাটাল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি, একটি সুপরিকল্পিত ও টেকসই রিভার ম্যানেজমেন্ট কাঠামো গড়ে তোলার।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—কবে আসবে সেই স্থায়ী সমাধান, নাকি প্রতিবারই ক্ষয় ও কষ্টই হবে নিয়তি?

এম আর এম – ০২৫২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button