বিশ্ব

ইরান বলছে, হামলার আগেই খালি হয়েছিল পারমাণবিক কেন্দ্র

Advertisement

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ জুন ২০২৫, রবিবার

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ওয়াশিংটন দাবি করেছে, স্থাপনাগুলোর বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তবে ইরান বলছে, আগেই এসব কেন্দ্র খালি করে ফেলা হয়েছিল। এই ঘটনাকে ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে বিতর্ক, উদ্বেগ এবং নানা প্রতিক্রিয়া।

ঘটনার পটভূমি

রবিবার (২২ জুন ২০২৫) বিবিসি’র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের ফোর্দো, ইসফাহান ও নাতানজে অবস্থিত পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় স্থাপনাগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। আহত কিংবা নিহতের খবরও এখনো নির্দিষ্টভাবে পাওয়া যায়নি।

হামলার সময় ও পরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, কূটনৈতিক সূত্র এবং সামরিক বিশ্লেষকরা পরিস্থিতি মূল্যায়ন করছেন। মার্কিন প্রশাসনের দাবি, পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

ইরানের প্রতিক্রিয়া: আগে থেকেই প্রস্তুতি ছিল

ইরানের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমের উপ-রাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি জানিয়েছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই ইরান ওই তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্র খালি করে ফেলে।” এর ফলে প্রাণহানি বা বিকিরণের ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো গেছে বলে দাবি তাদের।

তেহরান আরও বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে এবং এটি সরাসরি রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদের সামিল।

মার্কিন অবস্থান ও বিবৃতি

হামলার পর এক টেলিভিশন ভাষণে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “আমরা ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রগুলো পুরোপুরি ধ্বংস করেছি।” তিনি আরও বলেন, “তেহরানকে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল, কিন্তু তারা শুনেনি।”

তবে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী (রাজনৈতিক-সামরিক) মার্ক কিমিট এই দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিবিসি নিউজ চ্যানেলে তিনি বলেন, “এটা নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে।”

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পর্যবেক্ষণ

জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা (IAEA) এবং সৌদি আরব উভয়েই জানায়, হামলার পর ইরানের সংশ্লিষ্ট এলাকায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে যায়নি। এর ফলে ধারণা করা হচ্ছে, পারমাণবিক উপাদান বা মজুদকৃত তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।

IAEA আরও জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্ববাসীর উদ্বেগ স্বাভাবিক।

ইরানের কঠোর হুঁশিয়ারি

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক কড়া বিবৃতিতে বলেন, “ফোর্দো, ইসফাহান ও নাতানজে চালানো এই যুক্তরাষ্ট্রের আক্রমণের জন্য চিরস্থায়ী মূল্য দিতে হবে।” তিনি এটিকে যুদ্ধ ঘোষণার সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করেন।

তিনি আরও বলেন, “যেকোনো পরবর্তী আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক মহলে জবাবদিহি করতে হবে এবং ইরান আত্মরক্ষার সব অধিকার সংরক্ষণ করে।”

বিশ্লেষণ ও পরিণতি

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করতে পারে। এমনিতেই ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান সংঘাতকে ঘিরে পরিস্থিতি অস্থির। এর মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি এই হস্তক্ষেপ ইরানের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোভাবেও পরিবর্তন আনতে পারে।

বিশ্ব জ্বালানি বাজারেও এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে।

উপস্থিত কর্মকর্তারা (প্রাসঙ্গিক হলে)

এই হামলার পরপরই ইরানের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল এক জরুরি বৈঠক ডাকে। এতে অংশগ্রহণ করেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, সামরিক প্রধান হোসেন সালামি এবং পরমাণু সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ এসলামী।

এ এইচ এন ০০৭০০০১, ‍Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button